Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


রোজা অবস্থায় যেসকল চিকিৎসা নেওয়া যাবে, যাবে না

Main Image

২০০৪ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়


রোজা রাখা অবস্থায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কী কী করা যাবে এবং কী কী করা যাবে না তা নিয়ে যেমন সাধারণ রোগীদের মধ্যে দ্বিধা, জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব রয়েছে, তেমনি চিকিৎসকদের মাঝেও রয়েছে নানা সংশয় ও বিভ্রান্তি।  

এ সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করতে ১৯৯৭ সালের জুন মাসে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত নবম ফিক্বহ-চিকিৎসা সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সম্মেলনে জেদ্দা ইসলামিক ফিকহ একাডেমি, আল আজহার ইউনিভার্সিটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর এবং ইসলামিক শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (আইএসইএসসিও) প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞ প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনের মূল আলোচনার বিষয় ছিল রোজা অবস্থায় যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগে রোজা নষ্ট হবে না সে বিষয়ে একটি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। এ লক্ষ্যে ইসলামিক চিন্তাবিদগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা ও গবেষণা করে রোজা অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন যা ২০০৪ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়।

 

আসুন জেনে নিই কোন কোন চিকিৎসায় রোজা ভাঙবে ও ভাঙবে নাঃ

১. রোজা অবস্থায় ইনহেলার, নাকের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে।

২. রোজা অবস্থায় চোখ, ও কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে।

৩. হার্টের এনজাইনার সমস্যার জন্যে বুকে ব্যথা উঠলে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহবার নিচে ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না।

৪. রোজা রেখে শিরা পথে খাদ্য-উপাদান ছাড়া কোনো ওষুধ ত্বক, মাংসপেশি বা হাড়ের জোড়ায় ইনজেকশান হিসেবে প্রয়োগ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

৫. রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ জাতীয় কোনো তরল শিরা পথে গ্রহণ করা যাবে না।

৬. চিকিৎসার প্রয়োজনে রোজা রেখে অক্সিজেন কিংবা চেতনা নাশক গ্যাস গ্রহণে রোজা নষ্ট হবে না।

৭. চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েনমেণ্ট, ব্যাণ্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং এসব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোনো সমস্যা হবে না।

৮. রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে। দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া দাঁত পরিষ্কার করার সময় অসাবধানতাবশত কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না।

৯. রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষার জন্যে রক্ত দিতে বাধা নেই।

১০. কাউকে রক্তদানে এবং রক্তগ্রহণেও বাধা নেই।

১১. চিকিৎসার জন্যে যোনিপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটোরি ব্যবহার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।

১২. পরীক্ষার জন্যে যোনিপথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙুল প্রবেশ করালেও রোজার সমস্যা হবে না।

১৩. রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্যে হিস্টেরোস্কপি এবং আই.ইউ.সি.ডি ব্যবহার করা যাবে।

১৪. হার্ট কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের এনজিওগ্রাফি করার জন্যে কোনো রোগ নির্ণয়কারক দ্রবণ শরীরে প্রবেশ করানো হলে রোজার ক্ষতি হবে না।

১৫. কোনো অঙ্গের অভ্যন্তরীণ চিত্রধারণের জন্যে সেই অঙ্গের প্রবেশপথে কোনো ক্যাথেটার বা নালীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরল রঞ্জক প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হবে না।

১৬. রোগ নির্ণয়ের জন্যে এণ্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করলেও রোজা নষ্ট হয় না। তবে এণ্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার সময় ভেতরে তরল কিংবা অন্য কোনো কিছু প্রবেশ করানো যাবে না যার খাদ্যগুণ রয়েছে।

১৭. রোজা রাখা অবস্থায় না গিলে মাউথওয়াশ, মুখের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে এবং গড়গড়া করা যাবে।

১৮. রোজা রাখা অবস্থায় লিভারসহ অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে।

১৯. রোজা রাখা অবস্থায় পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে।

তবে নাকের ড্রপের ব্যাপারে অনেক স্কলার আপত্তি করেন। অনেকসময় এসব ফিক্বহী বিষয়ে বিভিন্ন স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে।

আরও পড়ুন