Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫


বাড়ছে শিশুদের দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যা

Main Image


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের মধ্যে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, বিশেষ করে দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা, উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এর পেছনে বড় একটি কারণ হলো ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে অতিরিক্ত সময় কাটানো। আপনি যদি আপনার সন্তানের মধ্যে এমন লক্ষণ দেখে থাকেন, কিংবা নিজের মধ্যেও, তাহলে আপনি একা নন।
মায়োপিয়া বা নিয়ারসাইটেডনেস (দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যা) শিশুদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে, এবং কোভিড-১৯ মহামারির সময় যখন পড়াশোনা ও বিনোদন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল, তখন এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হয়।

 

দৃষ্টিক্ষীণতা (মায়োপিয়া): কী এবং কেন

দৃষ্টিক্ষীণতা (দৃষ্টিক্ষীণতা (মায়োপিয়া)) সমস্যায় ভুগলে দূরের বস্তু ঝাপসা দেখা যায়, কিন্তু কাছের জিনিস পরিষ্কার দেখা যায়। এটা তখনই হয় যখন চোখের আকৃতি লম্বাটে হয়ে যায়, ফলে আলো সরাসরি রেটিনার ওপর না পড়ে তার সামনেই ফোকাস করে। এই সমস্যা সাধারণত শৈশবে শুরু হয় এবং বয়ঃসন্ধির সময় আরও খারাপ হতে পারে।

 

দৃষ্টিক্ষীণতা (মায়োপিয়া) হওয়ার কারণ 

১. পারিবারিক ইতিহাস: বাবা-মায়ের একজন বা উভয়ই যদি দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যায় ভোগেন, তাহলে সন্তানের মধ্যে এই ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
২. অতিরিক্ত কাছের কাজ: দীর্ঘ সময় বই পড়া, মোবাইল বা ট্যাবলেট দেখা ইত্যাদি চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
৩. বাইরের পরিবেশে সময় না কাটানো: শৈশবে নিয়মিত বাইরে সময় কাটানো দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

 

দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যার বাড়তি প্রবণতা: একটি উদ্বেগজনক চিত্র 

মহামারিকালীন সময় থেকে শিশুদের মধ্যে দৃষ্টিক্ষীণতা দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যা দ্রুত হারে বেড়েছে। কারণ সেই সময়ে পড়াশোনা থেকে বিনোদন পর্যন্ত সবকিছু স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ ছিল, এবং বাইরের খেলাধুলা বা সূর্যের আলোতে সময় কাটানো প্রায় বন্ধ ছিল।

 

স্ক্রিন টাইম ও চোখের দৃষ্টিক্ষীণতা সমস্যা

দীর্ঘ সময় ধরে কাছের কাজে চোখ লাগিয়ে রাখা যেমন মোবাইল দেখা বা পড়া শিশুদের চোখের বল লম্বা হতে সাহায্য করে, যা দৃষ্টিক্ষীণতার মূল কারণ। বড়দের ক্ষেত্রে এতে চোখের ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও বিদ্যমান দৃষ্টিশক্তির আরও অবনতি হতে পারে।

 

এর প্রাথমিক লক্ষণ

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে তা দৃষ্টিক্ষীণতার ইঙ্গিত হতে পারে:

  • ১. দূরের কিছু দেখতে গেলে চোখ ঝাপসা দেখা
  • ২. পরিষ্কারভাবে দেখতে চোখ ছোট করে তাকানো (squinting)
  • ৩. ঘন ঘন চোখে হাত দেওয়া বা চোখ চুলকানো
  • ৪.বই বা বস্তু খুব কাছে এনে দেখা

 

দৃষ্টিক্ষীণতা নিয়ন্ত্রণ

দৃষ্টিক্ষীণতা পুরোপুরি সারানো না গেলেও, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এর অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিছু কার্যকর পদ্ধতি হলো:

  • ক. চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স: দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে ব্যবহৃত হয়।
  • খ. অর্থোকেরাটোলজি (Ortho-K): রাতে পরার জন্য বিশেষ কনট্যাক্ট লেন্স, যা কর্নিয়ার আকৃতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে।
  • গ. লো-ডোজ অ্যাট্রোপিন আই ড্রপস: বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত দৃষ্টিক্ষীণত ধীর করতে সহায়ক।
  • ঘ. মাল্টিফোকাল চশমা: দৃষ্টির উন্নতি ও অগ্রগতি থামাতে সাহায্য করে।
  • ঙ. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: নিয়মিত বাইরের খেলাধুলা ও পরিমিত স্ক্রিন ব্যবহারে সহায়ক।

 

জেনেটিক্স বনাম পরিবেশ 

যদিও জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ, তবে বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে পরিবেশগত কারণ, যেমনঃ স্ক্রিন ব্যবহারের পরিমাণ, বাইরে সময় কাটানোর হার এই বিষয়গুলোও সমানভাবে প্রভাব ফেলছে এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

চোখের যত্নে যা করা প্রয়োজন 

  • ১. প্রতিদিন অন্তত ৯০-১২০ মিনিট বাইরের পরিবেশে খেলাধুলা করতে দিন।
  • ২. স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন এবং ২০-২০-২০ নিয়ম মানতে সাহায্য করুন (প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের দিকে তাকানো)।
  • ৩. ভালো আলোয় পড়াশোনা বা কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ৪. বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করান, এমনকি যদি কোনো সমস্যা চোখে না পড়েও।

 

শিশুদের মধ্যে দৃষ্টিক্ষীণতা (মায়োপিয়া) এখন সবচেয়ে সাধারণ রিফ্র্যাকটিভ সমস্যা। তাই সচেতন অভ্যাস, আগেভাগে শনাক্তকরণ, এবং নিয়মিত চোখ পরীক্ষা এই সব মিলেই আমাদের শিশুদের চোখের যত্নের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। 

আরও পড়ুন