‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর যাত্রা শুরু

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2024-09-12 17:37:00
‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর যাত্রা শুরু

‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর যাত্রা শুরু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের সাত সদস্যের পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। 

 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয় থেকে ১৯৬১ সালের স্বেচ্ছাসেবামূলক সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশের অধীনে ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন সনদ (ঢ-০১০০৬৪) দেয়া হয়। একই সঙ্গে দুই বছরের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

 

একই দিন ফাউন্ডেশনের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়, গত ২৪ আগস্ট নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত এবং সভাপতিযোগে প্রাপ্ত পত্রের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সাত সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ অনুমোদন দেওয়া হলো। কমিটির মেয়াদ হলো গত ২৪ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত; দুই বছর।

 

ফাউন্ডেশনের সাত সদস্যের পরিষদের সভাপতি হিসেবে আছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ সম্পাদক থাকছেন- শহীদ মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)।  কোষাধ্যক্ষ কাজী ওয়াকার আহামদ, দপ্তর সম্পাদক তথ্য সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাহী সদস্য হয়েছেন।

 

ফাউন্ডেশনের অস্থায়ী ঠিকানা- ৩৫, রোড-৯/ডি, সেক্টর-৫, উত্তরা, ঢাকা। ফাউন্ডেশন ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬৩১ এবং আহত ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি। আন্দোলন শুরুর পর গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত হতাহতের এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা এবং অন্য সুবিধা প্রদান করা নৈতিক দায়িত্ব। এছাড়া আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। তাই আন্দোলনে শহীদ, আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের সার্বিক কল্যাণার্থে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

 

ফাউন্ডেশনের প্রকৃতিতে বলা হয়েছে- ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবামূলক এবং জনকল্যাণমূলক সংস্থা।

 

যেসব সুবিধা দেওয়া হবে
 

ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের কল্যাণার্থে তাদের পরিবারকে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা, পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান বা অন্য কোনো উপযুক্ত সুবিধা দেওয়া হবে।

 

২০২৪ সনের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত বা পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের ওষুধপত্রসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান, কর্মসংস্থান, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান বা অন্য কোনো উপযুক্ত সুবিধা দেওয়া হবে।

 

আন্দোলনে আহত বা পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণসহ এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে কমিশন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, কর্মসংস্থান বা অন্য কোনো উপযুক্ত সুবিধা দেওয়া হবে।

 

ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য পূরণে বিভিন্ন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ, যে কোনো ব্যক্তি বা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদন, ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাঞ্জস্যপূর্ণ যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ফাউন্ডেশন।

সাংগঠনিক কাঠামো
 

ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি যাদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকবে তাদের জন্য ফাউন্ডেশনের সদস্যপদ উন্মুক্ত থাকবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের সদস্য হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে এবং নির্বাহী পরিষদ তার আবেদনপত্র গ্রহণ করতে হবে।

 

যদি কোনো সদস্য ফাউন্ডেশনের স্বার্থবিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ করেন তাহলে তার সদস্যপদ বাতিল করা যাবে।

 

ফাউন্ডেশনের কার্যাবলি পরিচালনার সাধারণ পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ থাকবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ফাউন্ডেশনের সব সদস্য সাধারণ পরিষদের সদস্য হবেন। ফাউন্ডেশনের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করবে। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি দুই বছর পর পর নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচন করবে।

সাধারণ পরিষদ ফাউন্ডেশনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বডি হবে জানিয়ে গঠনতন্ত্রে বলা হয়, সাধারণ পরিষদ বছরে অন্তত একবার সাধারণ সভা করবে এবং বার্ষিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবে।

 

অন্যদিকে সাত সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দপ্তর সম্পাদক ও তিনজন নির্বাহী সদস্য। নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা সাধারণ সভায় সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।

 

সভাপতি হবেন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী। গঠনতন্ত্রে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দপ্তর সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের দায়িত্ব ও কার্যাবলির বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ফাউন্ডেশনের তহবিল
 

গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ফাউন্ডেশনের একটি তহবিল থাকবে। এ তহবিলের অর্থের উৎস হবে সরকারের দেওয়া দান/অনুদান বা মঞ্জুরি, কোনো বিদেশি সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা এজেন্সি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান, সাধারণ সদস্যদের দেওয়া চাঁদা, সাধারণ পরিষদ এবং নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া চাঁদা বা অনুদান, ফাউন্ডেশনের সম্পত্তি বা যে কোনো কার্যক্রম থেকে আয়।

এছাড়া যে কোনো ব্যক্তি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বিধিবদ্ধ সংস্থা বা এমন কোনো সংস্থার দেওয়া দান অনুদান; তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা এবং ফাউন্ডেশনের নিজস্ব উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় থেকেও এ তহবিলে অর্থ আসবে।

 

নির্বাহী পরিষদ গঠন
 

নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬০ দিন আগে নির্বাহী পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না এমন সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুজন নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে বলে গঠনতন্ত্রে জানানো হয়েছে।

 

নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়ন আহ্বান করে লিখিত নোটিশ দেবেন এবং নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল ঘোষণা করবে।

 

নির্বাহী পরিষদের কোনো সদস্যের মৃত্যু বা পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে সদস্য পদ শূন্য হলে নির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সম্মতির ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদের কোনো সদস্যকে শূন্যপদে নিয়োগ করা যাবে।

 

নির্বাহী পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষরের নির্বাহী পরিষদের যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে। তবে এমন অনাস্থা তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সমর্থনে অনুমোদিত হতে হবে।

কোনো সুনির্দিষ্ট কারণে যদি ফাউন্ডেশনের তিন-চতুর্থাংশ সদস্য ফাউন্ডেশনের বিলুপ্তি চান তাহলে সাধারণ সম্পাদক একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবেন এবং ওই সভায় ফাউন্ডেশনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকাসহ বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

 


আরও দেখুন: