যে কারণে বাড়ছে বিকল্প দুধের বাজার

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2023-09-22 20:20:09
যে কারণে বাড়ছে বিকল্প দুধের বাজার

বাজারের প্যাকেটজাত দুধ

শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কৌশলগত ত্রুটিতে বাড়ছে বিকল্প দুধের বাজার। জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার গত ৪ বছরে কমেছে ১০ শতাংশ। এই সময়ে বিকল্প দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য আমদানির বাজার বেড়েছে এক হাজার ৬শ' কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কমিশন ও প্রলোভনে পড়ে চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, এমনকি নার্সরাও প্রেসক্রাইব করছেন বিকল্প দুধের। তবে শিশুর সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রথম ৬ মাস এক ফোটাও বিকল্প দুধ না দেবার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। 

রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মাতৃদুগ্ধ সেন্টার। প্রতিদিন নবজাতক, শিশু ও মায়েদের উপচে পড়া ভীড়। সমস্যার মূলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে না পারা। শিশুর দুধ না পাওয়া, খেতে অনীহা, বুকে দুধ জমে চাকা হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রে আসেন ভূক্তভোগীরা। তবে আশার খবর হলো এক বুক হতাশা নিয়ে আসা মায়েদের ৯৮ শতাংশ বাড়ি ফিরে যান হাসি মুখে।

পরামর্শ, মা ও শিশুর অবস্থানগত কৌশল, সম্পৃক্ততা দেখিয়ে দেয়ার পরও সমস্যার সমাধান হয়না কোন কোন মায়ের। তাদের জন্য রয়েছে বিশ্বস্বীকৃত জাপানের ওকাতানি ব্রেস্ট মাসাজ। যে প্রক্রিয়ায় ভূক্তভোগী ৮/১০ শতাংশ মায়ের বুকে তৈরী হয়, দুধের প্রবাহ ।

শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ছাড়াও ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে দুগ্ধ সেন্টারে কর্মরতদের ওকাতানি ব্রেস্ট মাসাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে হাতে কলমে। আগামীতে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক পর্যন্ত এই সেবা ছড়িয়ে দিতে জাপানের সঙ্গে কাজ করছে সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, যেসব শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাদের মৃত্যুর হার বুকের দুধ না খাওয়ানো শিশুদের চেয়ে ১৪ গুণ কম। অথচ বুকের দুধের বিকল্প পণ্যের আগ্রাসী বিপণন, বিশেষ করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের জন্য বাবা-মা স্বাস্থ্য খাতের যেসব পেশাজীবীদের ওপর আস্থা রাখেন, তাদেরই বিপণনে জড়িয়ে যাওয়া নবজাতক ও শিশুদের শারিরীক এবং মানসিক গঠনে সবচেয়ে বড় বাধা। হতাশার খবর হলো পেশাজীবীদের এই সংখ্যা দেশে ৫৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০২২ এর তথ্য বলছে, গত ৪ বছরে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং ১০ শতাংশ কমে ৫৫ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে বাড়ছে বিকল্প দুধ আমদানির বাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে বিকল্প দুধ ও ডেইরি প্রডাক্ট আমদানির বাজার ২ হাজার ৩শ' কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৯শ' কোটিতে পৌঁছেছে। বাবা মায়েদের অনেকেই বিকল্প দুধকে শিশুর জন্য উপকারী ভাবলেও জাতীয় আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিন্ন কথা।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, কমিশন ও নানা ধরনের প্রলোভনে পড়ে চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, এমনকি নার্সরাও প্রেসক্রাইব করছেন বিকল্প দুধের। যদিও ফার্মেসি ও সুপারশপের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, বিকল্প দুধ প্রেসক্রাইবের শীর্ষে রয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে আইন অনুযায়ী বিনা কারণে প্রেসক্রিপশনে বিকল্প দুধ লেখা দন্ডনীয় অপরাধ হলেও জানেন না অভিভাবক, চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের অধিকাংশই। আর জানলেও নেই আইনের প্রয়োগ, মানছেন না কেউ-ই।

সরকারি প্রায় ২৫টি হাসপাতালে মায়ের বুকের দুধের সেন্টার থাকলেও বেসরকারী পর্যায়ে নেই একটিতেই। তাই নবজাতক জন্মের প্রথমদিন থেকেই বুকের দুধ খাওয়ানোর সমস্যা নিয়ে মায়েরা যান চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের কাছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের সাধারণ কৌশল না শিখিয়ে তারা ব্যবস্থাপত্রে দেন বিকল্প দুধ। এতে পরিবারের অর্থনৈতিক চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও মা দুজনই শারীরিকভাবে ক্ষতির শিকার হন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


আরও দেখুন: