থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করুন 

ডক্টর টিভি রিপোর্ট :
2023-05-08 20:15:31
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করুন 

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে হেমাটোলজি বিভাগ এবং শিশু হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগ আয়োজিত কর্মসূচি

থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। তাঁর মতে, বর ও কনে উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।

আজ সোমবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে হেমাটোলজি বিভাগ এবং শিশু হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগ পৃথকভাবে র‌্যালি, সেমিনারের আয়োজন করে। এছাড়া শিশু হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। এসব কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। 

ভিসি আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয়ের স্ক্রীনিং প্রোগ্রামের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও রোগটির সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জিন থেরাপি, স্টেম সেল থেরাপি এ ধরনের চিকিৎসাসেবার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য যাতে দেশের বাইরে যেতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনার বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ হাফিজুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহ্উদ্দিন শাহ, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ১০ শতাংশের অধিক মানুষ থ্যালাসেমিয়া অথবা হিমোগ্লোবিন ই এর বাহক। একই প্রক্ষেপণে ধারণা করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় নয় হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এদেশে ষাট থেকে সত্তর হাজার রোগী বিটা থ্যালাসেমিয়া অথবা হিমোগ্লোবিন ই রোগ নিয়ে বসবাস করছে।

থ্যালাসেমিয়া রোগ রক্তের হিমোগ্লোবিন এর গ্লোবিন জিনের বংশগত ক্রটির কারণে হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে থ্যালসেমিয়া রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে এবং রক্তের মাধ্যমে শীররে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে শরীরের বৃদ্ধি কম হয় এবং বিভিন্ন হাড়ের গঠনে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। বারবার রক্ত নিয়ে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত আয়রণ জমা হতে থাকে এবং লিভার, হৃদপিন্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বাবা মা উভয়ে বাহক হলেই সাধারণত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে পরিহার করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হতে পারে।
বক্তারা বলেন, থ্যলাসেমিয়া সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন, সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনা তৈরি করতে হবে। বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া স্ক্রীনিং মাধ্যমে ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত জন্মের সংখ্যা শূণ্যে নামিয়ে নিয়ে আসা, থ্যালাসেমিয়ার সকল রোগী যাতে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুলভে পেতে পারেন এবং থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার সর্বাধুনিক সুবিধাদি সহজলভ্য করা ব্যাপারে সরকারী বেসরকারী সকল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।


আরও দেখুন: