থ্যালাসেমিয়া দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
থ্যালাসেমিয়াকে দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোগটি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে সংশ্লিষ্ট দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে বিয়ের আগেই এই রোগের জীন বাহক কিনা, তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সোমবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রোববার (৭ মে) দেওয়া বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, থ্যালাসেমিয়া বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি। বাংলাদেশে এই রোগের জীন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে বিয়ের আগে এই রোগের জীন বাহক কিনা, তা জেনে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
দুরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া এবং এর বাহকে-বাহকে বিয়ে প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বাড়ি ও মহল্লায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি সকল পেশাজীবী ব্যক্তি ও সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, অভিভাবকসহ সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এবং জনসাধারণকে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি) সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা চালু করার কথা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও অনূর্ধ্ব-৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যু হার, অপুষ্টি, খর্বতা, কম-ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে তাঁর সরকার। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কমসূচি (৪র্থ এইচপিএনএসপি) এর মোট ২৯টি অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় ২০১৭-২০২২ মেয়াদে সেক্টর ওয়াইড কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নতুন রোগ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত ও দক্ষ ঔষধখাত এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হচ্ছে।