শব্দদূষণে বেহাল ঢাকা, নেই পদক্ষেপ
ঢাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল, যা বিশ্বের শীর্ষে
দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে শব্দদূষণের মাত্রা। যেখানে শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ ডেসিবেল থাকার কথা, সেখানে রাজধানীর কোথাও তা নেই।
শব্দদূষণের ফলে দিন দিন মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে বধিরতা। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যেসব কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সে ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বুধবার (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশসহ বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস।
১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ বুধবারে দিবসটি পালিত হয়। উদ্দেশ্য হলো– শব্দদূষণ রোধ, শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা, শব্দদূষণ রোধে করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা।
কিন্তু এবার সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। উন্নয়ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও কোনো কর্মসূচির খবর পাওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফজলে এলাহী বলেন, ইকিউএমএস নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এবার বিভাগীয় শহরগুলোতে শব্দদূষণের গবেষণা করা হয়েছে। তারা পুরো প্রতিবেদনটি এখনও জমা দেয়নি। প্রাথমিকভাবে যা পাওয়া গেছে, তাতে বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি স্থানে শব্দের মাত্রা বেড়েছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) ২০২২ সালের ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২: নয়েজ, বেন্ডজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ ৫৫ ডেসিমেল ও বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত অনুমতিযোগ্য। কিন্তু ঢাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল, যা বিশ্বের শীর্ষে এবং রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল, যা বিশ্বের চতুর্থ।
গাড়ির শব্দ, উড়োজাহাজ চলাচল, রেল চলাচল, যন্ত্রপাতি, শিল্প এবং বিভিন্ন উৎসব ও বিনোদনমূলক আয়োজনের ফলে এত দূষণ। এতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
২০২০ সালে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একটি জরিপ চালায়। পল্টন বাসস্ট্যান্ডে শব্দের মাত্রা পাওয়া যায় ১৯২ দশমিক ২ ডেসিবেল, সচিবালয়ের গেটে ১২৮ দশমিক ২, কদম ফোয়ারায় ১২৭ দশমিক ৬, জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাশে ১২৪ দশমিক ২ ডেসিবেল। অন্যান্য স্থানের চিত্রও একই রকম।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) ২০২২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর সড়ক ও আশপাশের দোকানে কর্মরত মানুষের শ্রবণ সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সড়কে কর্মরত বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রতি চারজনে একজন (২৫ শতাংশ) কানে কম শোনেন। ৭ শতাংশ মানুষ কানে এতটাই কম শোনেন যে, তাঁদের শ্রবণসহায়ক যন্ত্র (হিয়ারিং এইড) ব্যবহার করা জরুরি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত ৬৪৭ জনের শ্রবণশক্তি পরিমাপ করে এ চিত্র পাওয়া যায়। কানে কম শোনার সমস্যায় বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা; হার প্রায় ৪২ শতাংশ। এর পরে রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার চালক, দোকানদার, বাস শ্রমিক, ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও মোটরসাইকেল চালকরা।
সবচেয়ে কম শোনা ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন– কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কে কর্মরত ব্যক্তিরা। শব্দদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে বিইউএইচএস। পাশাপাশি রাজপথে কর্মরতদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা ও নিয়মিত শ্রবণশক্তি পরীক্ষারও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।