ব্রয়লার মাংস নিরাপদ, স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই: বিএআরসি
ব্রয়লার মুরগীর মাংসে সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার অনেক কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং ভারি ধাতুর অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে
ব্রয়লার মুরগীর মাংসে সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার অনেক কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং ভারি ধাতুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে। ফলে এই মাংস খাওয়াতে জনস্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি নেই। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ খাদ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ের পিআইডি হলে এক প্রেস ব্রিফিংকালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদা রশীদ ও বিএআরসির গবেষকরা।
ব্রিফিংয়ে গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে যেসব তথ্য জানানো হয় :
ব্রয়লার মুরগির মাংস, হাড় এবং কম্পোজিটে মূলত দু’টি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটাল (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) এর অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। এটা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে রয়েছে। খামার এবং বাজারে পাওয়া ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটালের পরিমাণ কম।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ব্রয়লার মাংসে গড়ে ৮.০ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ৯.১ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৬.২ পিপিবি আর্সেনিক, ১৯০.৭ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ২৫৯.১ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার চেয়ে যথাক্রমে ১২.৫ গুণ, ১০.৯ গুণ, ৬.৫ গুণ, ৫.২ গুণ এবং ২৩.১ গুণ নিচে রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির হাড়ের নমুনা পরীক্ষণের ফল সম্পর্কে বলা হয়, গড়ে ৫৩.৭ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ২৭.০ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৭.২ পিপিবি আর্সেনিক, ৪৩৯.৯ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৪৬৪.৬ পিপিবি লেড রয়েছে , যা সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে যথাক্রমে ১.৮ গুণ, ৩.৭ গুণ, ৫.৫ গুণ, ২.২৭ গুণ এবং ১২.৯ গুণ নিচে রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির কম্পোজিটে গড়ে ১৪.৫ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ১৭.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ১০.৯ পিপিবি আর্সেনিক, ২৩৯.২ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৩০৭.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে যথাক্রমে ৬.৮ গুণ, ৫.৮ গুণ, ৩.৬ গুণ, ৪.১৮ গুণ এবং ১৯.৫ গুণ নিচে রয়েছে।
বাজার এবং খামার থেকে সংগৃহীত ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে গড়ে ০.৮ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ১৯.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৪.১৯ পিপিবি টাইলোসিন, ৭.৬ পিপিবি আর্সেনিক, ২১৫৩:৩ পিপিবি ক্রোমিয়া এবং ৪৭৮.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা আর্সেনিকের ক্ষেত্রে ১৮৪.২ গুণ, ক্রোমিয়ামের ক্ষেত্রে ৯.২ গুণ এবং লেডের ক্ষেত্রে ২০.৮ গুণ সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে নিচে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ কিনা, তা জানতে এই গবেষণা গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে পরিচালিত হয়। ব্রয়লার মুরগির মাংস, হাড়, কম্পোজিট (কলিজা, কিডনি এবং গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কি পরিমাণ এন্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে তা নির্ণয় করাই ছিল গবেষণার উদ্দেশ্য।
গবেষক দল দেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার হতে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করেন। একইসাথে ঢাকা জেলার তিনটি সুপার শপ হতে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করেন তারা।
সংগৃহীত প্রায় ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য হতে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারি ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
আরও জানানো হয়, দশটি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৭টি (এনরোফ্লক্সাসিন, সিপরোক্সোসিন, নিওমাইসিন, টাইলোসিন, কলিস্টিন, এমোক্সাসিলিন এবং সালফাডায়াজিন) পরীক্ষণের জন্য নমুনাসমূহ এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের চেন্নাইয়ের এসজিএস ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। বাকি ৩টি অ্যান্টিবায়োটিক (ক্লোরামফেনিকল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি ভারি ধাতু (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) পরীক্ষণের জন্য নমুনাসমূহ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অধীন আধুনিক উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ আইএসও সার্টফাইড অ্যান্ড এক্রিডিটেড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি, সাভারে পাঠানো হয়।
সব জায়গার ফলাফল বিশ্লেষণ করে উপরোক্ত তথ্য তুলে ধরেন গবেষকরা।