রোগ শনাক্তে টেস্টের রেডিয়েশনে বাড়ছে থাইরয়েড

হাসান মাহমুদ
2022-05-26 16:28:04
রোগ শনাক্তে টেস্টের রেডিয়েশনে বাড়ছে থাইরয়েড

এক্স-রে বা আলট্রাসনোগ্রাফির সময় সতর্ক থাকতে হবে

রোগ শনাক্তের জন্য বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষায় ব্যবহৃত রেডিয়েশনসহ নানা কারণে থাইরয়েড সমস্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, থাইরয়েডের ফলে প্রসবকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ত্রুটিপূর্ণ শিশু জন্মদানের হার যেমন বাড়ছে, তেমনি থাইরয়েড ক্যান্সারও বাড়ছে।

হাইপোথাইরয়েডের জন্য আয়োডিন অভাবকে দায়ী করা হয়। তবে সরকারের উদ্যোগে আয়োডিনযুক্ত লবণ তৈরি কার্যক্রম প্রকল্প ২০১৮ সালে শেষ হওয়ায় এ সমস্যার উত্তরণ হয়েছে।

বিশ্বে প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস পালন করা হচ্ছে। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।

বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় বেলুন উড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যালি উদ্বোধন করে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ। এরপর বেলা ১১টায় র‌্যালি ও আলোচনা সভা করে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ। এ সময় শুরুতে রোগটি শনাক্ত করতে পারলে আক্রান্তের হার কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটোমের্টানাল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহরিন আক্তার বলেন, মায়েদের থাইরয়েড সমস্যা থাকলে শিশুর জন্মের সময় ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার বড় ঝুঁকি থাকে। এজন্য সবাইকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে প্রসব প্রস্তুতিতে মায়েদের অবশ্যই স্ক্রিনিং করাতে হবে।

থাইরয়েড রোগ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রেডিয়েশন অন্যতম কারণ বলে মনে করেন নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জিনাত জেবিন।

তিনি বলেন, এই রশ্মিগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে হরমোনের ক্ষতি করছে। এজন্য এক্স-রে বা আলট্রাসনোগ্রাফির সময় সতর্ক থাকতে হবে। আলট্রাসনোগ্রাফি রুমে অযথা মানুষের ভিড় না করাই ভালো। রেডিয়েশনের অন্যতম কারণ হতে পারে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কারণ দাঁত আর থাইরয়েড খুব কাছাকাছি থাকায় এ ঝুঁকি বেশি থাকে।

এদিকে দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রসবকালীন এন্ডোক্রাইনোলজি চিকিৎসা গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা করে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইনলিজি সোসাইটি। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের মধ্যে এ গাইডলাইন ছড়িয়ে দিলে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা সহজ হবে বলে মনে করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, আজ যে গাইডলাইন প্রকাশ করা হলো, সেটি অত্যন্ত চমৎকার। এটিকে সব চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে হবে। কারণ হিসেবে গুণী এ চিকিৎসক বলেন, আমাদের দেশের প্রান্তিক চিকিৎসকরাই সবচেয়ে বেশি রোগী দেখেন। তাদের কাছেই মানুষ সবার আগে যায়। তাদের মধ্যে এই গাইডলাইন দেওয়া গেল তারা অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। প্রয়োজেনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করতে পারবেন।

থাইরয়েড রোগ বৃদ্ধির কারণ জানতে বড় ধরনের গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা শুধু আয়োডিনের অভাবকেই থাইরয়েডের বড় কারণ হিসেবে মনে করে আসছি। অথচ গবেষণা বলেছে, আমাদের দেশে এখন মানুষের মধ্যে আয়োডিনের তেমন অভাব নেই। কারণ আমাদের দীর্ঘমেয়াদি আয়োডিনের প্রকল্প সফল হয়েছ। তবুও আমাদের দেশে রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বড় ধরনের গবেষণা।

তিনি আরও বলেন, আমরা কেন অন্যের গবেষণার ওপর নির্ভর করব বরং আমদের গবেষণা কবে বের করতে হবে আমাদের সমস্যা কোথায়?

থাইরয়েড আক্রান্তদের বড় একটি অংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া প্রসবকালীন থাইরয়েডে বেড়ে যায় ত্রটিপূর্ণ শিশু জন্মের ঝুঁকি। এজন্য রোগটি প্রতিরোধে বড় আকারে স্ক্রিনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আরও দেখুন: