স্ট্রোকের গরীব রোগীর চিকিৎসা ফ্রি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে
দেশে প্রতি এক হাজারে অন্তত ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন
ঘাতক ব্যাধি স্ট্রোকে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ আক্রান্ত হন। যাদের মধ্যে মারা যান ৫০ লাখ আর অর্ধ কোটি পঙ্গুত্ববরণ করেন। স্ট্রোককে বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ বলা হয়। মৃতদের দুই-তৃতীয়াংশ আমাদের মতো গরীব দেশে ঘটে। দিন দিন স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশেও এ হার কিন্তু কম নয়। দেশে প্রতি এক হাজারে অন্তত ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। স্ট্রোক থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
স্ট্রোক নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দেশে নিউরোলজির চিকিৎসায় নেতৃত্বদানকারী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে (নিনন্স) শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরো ইন্টারভেনশনের আয়োজনে সকাল ৮টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। এতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা অংশ নেন।
এরপর সকাল ১১ টায় সেমিনার হয়। এতে চেয়ারপারসন হিসেবে প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি। বিশেষ অতিথি মো. বদরুল আলম ও আবু নাসার রিজভী। প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ডা. খাইরুল কবির পাটোয়ারি, ডা. শিরাজী শফিকুল ইসলাম ও ডা. এটিএম হাছিবুল হাসান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বক্তারা বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা যত দ্রুত করা সম্ভব তত ফলাফল ভালো হয়। স্ট্রোকের চিকিৎসায় দেরি করলে উন্নতি হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। তাই দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। যদি মুখ বেঁকে যায়, এক হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায় তাহলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিলে অত্যাধুনিক আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা সম্ভব। স্ট্রোক প্রতিরোধে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, ধূমপান না করা ও নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করা জরুরি।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরো ইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মহিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনন্স) হাসপাতালে হচ্ছে। স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা যেটাকে মেকানিক্যাল থোম্বেক্টমি বলে আগামী বছর থেকে দেশে প্রথমবারের মতো নিনন্সেই শুরু হবে বলে আশা করছি। নিনন্সেই নিয়মিতভাবে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস, রক্তনালীর ফোস্কা বা এনিউরিজম, এভিএম বা অস্বাভাবিক রক্তনালীর চিকিৎসা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরো ইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারিভাবে একমাত্র নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়মিতভাবে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম মন্ডল বলেন, ‘নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল স্ট্রোক চিকিৎসায় দিকপালের কাজ করছে। স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে এটি। এ পর্যন্ত একশোর বেশি আইভি থ্রোম্বলাইসিস করেছে। রোগীরাও সুস্থ আছে। শুধু তাই নয় গরীব রোগীদের এ অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিনামূল্যে করছে নিনন্স। উপজেলার চিকিৎসক ও নার্সদের স্ট্রোকের চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের হার বাড়ছে। এটা প্রতিরোধ করার এখনই চেষ্টা করতে হবে।’
অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মালিহা হাকিম, অধ্যাপক জাহেদ হোসেন, অধ্যাপক খুরশীদ মাহমুদ, অধ্যাপক রাজিব নারায়ন চৌধুরী, অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী, ডা. সুভাষ কান্তি দে প্রমুখ।