দেশে মাদকাসক্ত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ কী?
মাদকাসক্ত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ এর সহজলভ্যতা
বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ এর বাইরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করলেও মাদকাসক্ত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে মাদকের সহজলভ্যতা বা প্রাপ্তিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে আজ আন্তজাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান রতন ডক্টর টিভিকে বলেন, মাদক এখন সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সরকার অনেক সচেষ্ট। বিজিবি, পুলিশ, র্যাব যথেষ্ট দক্ষতার সাথে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও মাদক আমাদের দেশে প্রবেশ করছে, কোনোভাবেই পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, মাদকের সহজপ্রাপ্যতার কারণে এর বিস্তার বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে।
ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান রতন বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন গবেষণায় আমরা দেখছি, যারা মাদক নিচ্ছেন তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই যুবক। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর এই তরুণ প্রজন্ম মাদক নেওয়ার প্রধাণ কারণ হলো বন্ধুদের দেখে নিয়ে থাকে। একজনের দেখে আরেক জন উৎসাহ পায়।
আরেকটা বড় কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন পার্সোনালিটিজ প্যাটেন্ট বা ব্যক্তি বিশেষকে। একটা নতুন কিছু খোঁজে নেওয়ার প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্য থেকে হয়। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ মাদক নিচ্ছে। তার মানে এই না যে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সবাই তরুণ প্রজন্মের।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বয়সের মানুষও মাদক নিচ্ছে। ১৫ বছর বয়সের নিচের মাদকাসক্তও আমরা পাই, আবার যাদের বয়স ৫০-৬০ এমন ব্যক্তি আছে যারা মাদকাসক্ত।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বড় একটা অংশ হলো তরুণ প্রজন্ম। যাদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষিত, বেকার যুব সমাজরাও আছে। বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে হতাশাগ্রস্ত বা মানসিক রোগে আক্রান্ত এরকম একটা বড় অংশ আছে যারাও মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বর্তমান সময়ে আমরা করোনা মহামারীর মধ্যে আছি। এটাও একটা বড় ঝুঁকি মাদকাসক্তি হওয়ার উল্লেখ করে এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমানে তরুণদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তন হলো- আগে যেমন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল। তাদের সুস্থ বিনোদনের জায়গা ছিল। কিন্তু এখন তাদের সুস্থ বিনোদনের জায়গা কমে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ সময় কাটাচ্ছে ঘরে বসে। যেখানে তারা সবসময় অনলাইনে যুক্ত থাকছে। এতে মোবাইল অ্যাডিকশন এবং ফেসবুক আসক্ত কিংবা পর্নোগ্রাফির মত জঘন্য আসক্তিতে নিমজ্জিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির এই আসক্তিতে পড়ে তাদের হতাশা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এইগুলো থেকে দূর হওয়ার জন্য সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এখানে বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহে মাধ্যমে মাদক আসক্ত হচ্ছে যুবসমাজ।
মাদকের এই ভয়াবহতার জন্য সমাজে আরও সচেতনতা তৈরি এবং অনেক বেশি কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. মো. জিল্লুর রহমান। সেক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসিক রোগের চিকিৎসার আধুনিকায়ন করে ইনডোর সেবা চালু করতে পারলে, মাদকাসক্তি চিকিৎসা আরো ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।