অনিরাপদ রক্তগ্রহণে বাড়ছে রোগ
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান দিচ্ছে বিভিন্ন উৎস, যার ৩০ শতাংশই স্বেচ্ছা রক্তদান
রক্ত নিয়ে মুমুর্ষু রোগীর জীবন রক্ষা হলেও এ প্রক্রিয়ার একটু ভুলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তেমনি এক ভুক্তভোগী কুড়িগ্রামের ববিতা বেগম। নিরাপদ রক্তের খোঁজে যিনি ছয় বছরের শিশুকে নিয়ে এসেছেন ঢাকার একটি হাসপাতালে।
তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম শহর থেকে বেঁচে থাকার জন্য রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু ওখান থেকে দিয়ে কোনো কাজ হয়নি। ওখানে কোনো পরীক্ষা নাই। শুধু ক্রসমেসিংটা করেই রক্ত দেয়া হয়। ওখান থেকে দিলে আইরন বেশি হয়। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। তারপরও এত দূরে আসার কষ্টে ওখান থেকে দিতে হয়।’
আর ১২ বছরের সন্তানকে নিয়ে নোয়াখালীর মুখলেছুর রহমানও এসেছেন ঢাকায়। তার অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। অনিরাপদ রক্তগ্রহণে তার সন্তান হয়েছিল মৃত্যুপথযাত্রী। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে রক্ত ওয়াস করা যায় না। সেখানে যখন রক্ত দিছি তখন আমার ছেলের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঢাকায় আসি। ডাক্তার বলেন, আমরা যাদের কাছ থেকে রক্তটা নিয়েছি, ওদের কোনো সমস্যা আছে।’
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান দিচ্ছে বিভিন্ন উৎস, যার ৩০ শতাংশই আসছে স্বেচ্ছা রক্তদান থেকে। বাকি ৭০ শতাংশের মধ্যে পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আর নিরাপদ রক্তগ্রহণে এটিকেই বড় বাধা বলছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীরা কখন রক্তটা নিচ্ছে? শরীরে কোনো সমস্যা আছে বলেই রোগীরা রক্ত নিচ্ছে। তখন যদি সমস্যাযুক্ত রক্তই দেয়া হয়, তাহলে রোগীর জীবন সংশয়ে পড়ে। রক্ত দেওয়ার দুটি গ্রুপ আছে। একটা হলো পেশাদার রক্তদাতা; আরেকটা হলো স্বেচ্ছায় রক্তদাতা। পেশাদারের রক্তটা আমাদের অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের রক্তটা পরীক্ষা করে নেওয়া উত্তম।
যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থার অভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশের ব্লাড ব্যাংকগুলোতে নিরাপদ রক্তদান ও গ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছে রক্তদাতা সংগঠনগুলো।
তাদের ভাষ্য, অনেক তরুণদের রক্ত দেয়ায় আগ্রহ থাকলেও তারা এসে রক্ত দিতে পারছে না। আবার অনেকের ব্লাড ব্যাংকে এসে রক্ত দেয়ায় অনীহা রয়েছে। কারণ, এখানে গাড়ি ভাড়ার একটা ব্যাপার জড়িত। এটিই রক্ত সংগ্রহের সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা। এর সাথে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের সিইও ডা. এ কে এম একরামুল হোসাইন স্বপন বলেন, ‘রক্ত নেয়ার আগে হেপাটাইটিস বি-সি, এইচআইভি, এইস এবং যৌন কোনো সমস্যা আছে কিনা দেখে, তা পরীক্ষা করার পরই আমরা রোগীকে দিয়ে থাকি।’ অনিরাপদ রক্তগ্রহণের ফলে তৃণমূলে বিভিন্ন রোগের প্রকপ বাড়ছে বলে জানান বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের এ চিকিৎসক।
রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্ত জীবাণুমুক্ত কিনা তা যথাযথভাবে পরীক্ষা করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল রক্তগ্রহণ থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানান তারা।