রোজায় পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া বুঝে খাবার গ্রহণ করুন

নাহিদা আহমেদ
2021-04-26 10:04:11
রোজায় পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া বুঝে খাবার গ্রহণ করুন

পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া বুঝে রোজায় খাবার গ্রহণ করুন

আমরা ইফতারিতে খাবার খাই, কিন্তু শরীরের মধ্যে সেটা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় সে বিষয়টা মাথায় রাখি না। এখন রোজার সময় ১৩/১৪ ঘণ্টা পানাহার ব্যতীত থাকছি। আমরা যদি আমাদের পাকস্থলীর কথা চিন্ত করি, এই অর্গানটি কিন্তু বেশি বড় না। সেক্ষেত্রে আমরা যদি ইফতারিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

আমাদের পাকস্থলী সাধারণত দেখা যায় যে, ৭৩ মিলিলিটার পর্যন্ত এটি বিশ্রাম অবস্থায় থাকে। তো এটির ভেতরে যখন খাবারটা যাবে, তখন দেখা যাবে এটি এক লিটার পর্যন্ত প্রসারণ ঘটতে পারে। তবে আমরা যদি অতিরিক্ত চাপাচাপি করে খাবার গ্রহণ করি, তাহলে সর্বোচ্চ তিন লিটার পর্যন্ত প্রসারিত হবে।

কিন্তু এর ফলে আমার বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হবে। বদহজম, বায়ু সমস্যা, অ্যাসিডিটির সমস্যাসহ পাশাপাশি অস্বস্তিতে ভুগতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় রোজা থেকে আমরা যখন অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে প্রতিনিয়ত অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগি। কাজেই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আমরা খেজুর দিয়ে ইফতার খোলার পরেই নরমাল পানি না খেয়ে লেবুর পানি খেতে পারি। তবে লেবুর পানিতে চিনি কিন্তু মেশানো যাবে না। কারণ চিনি শর্করা খাবার। আমরা যখন শর্করা জাতীয় খাবার একেবারে প্রথমে গ্রহণ করবো, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে আমাদের শরীর ওই শর্করাটা ভেঙে এনার্জিতে রূপান্তর করবে। এর ফলে আমরা যখন অন্যান্য আঁশজাতীয় খাবার খাবো, যেগুলো আমাদের শরীরে প্রয়োজন (ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন) সেগুলো সঠিকভাবে শোষণ করতে পারবে না।

আর যেহেতু রমজান মাসে আমরা দীর্ঘ সময় পানাহার ব্যতীত থাকছি, সেকারণে আমাদের একটা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যাতে আমাদের শরীরে প্রতিটি নিউট্রিশিয়ান শোষিত হয়। সেজন্য প্রথমে খেজুর মুখে দিয়ে পানি পান করে নিলাম; তারপর আস্তে আস্তে করে তরল বা সহজে হজম জাতীয় খাবার খেতে হবে।

আমরা যদি স্বাস্থ্যকর মেন্যু বজায় রাখাতে পারি তাহলে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টিউপাদান শোষণে সেটি সাহায্য করবে। সেজন্য অবশ্যই শরীরে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে রমজান মাসের খাবার তালিকা করতে হবে।

সাধারণত আমরা ইফতারিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে ফেলি। ফলে রাতে খাবার গ্রহণ করার ইচ্ছা একেবারে কমে যায়। আর তাই রাতে না খেয়ে একেবারে সেহেরিতে যেয়ে খাই। আমরা সবাই জানি অন্য ১১ মাসের চেয়ে রমজান মাস একেবারেই ভিন্ন।

তবে এসময়ে আমার শরীরের ক্যালোরির যে চাহিদাটা সেটা কিন্তু একই থাকছে। এখন আমি যদি অতিরিক্ত খাবার একবারে গ্রহণ করে ফেলি, তাহলে বদহজম, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যাসহ শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সেজন্য একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে আপনার খাবার তালিকাটা ছয় ভাগে ভাগ করে নিন। সাধারণ সময় আপনি তিনটা মিল নেন আর অন্য তিনটা স্নাক্স জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে রমজান মাসে কেন এর ব্যাতিক্রম ঘটবে? আপনি যদি একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনার শরীর ভালোভাবে কাজ করতে সহযোহিতা করবে। এজন্য অবশ্যই আমরা রাতের খাবারটা রাখবো।

এখন রাতের খাবারটা কীভাবে খাবো? অন্যান্য সময় রাতে আমরা যতটুকু পরিমাণে খাবার গ্রহণ করছি, ঠিক সেই সমপরিমাণ খাবার রোজার সময়ের রাতে গ্রহণ করবো। খাবারে যেন ছয় পুষ্টিউপাদান (আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) বর্তমান থাকে সেই ভাবে রাতের খাবার মেন্যু সাজাতে হবে।

কারণ অন্য ১১টি মাসে আমার ক্যালোরির চাহিদা যদি ১৪শ’ কিলো ক্যালোরি হয়, তাহলে রমজান মাসেও কিন্তু আমার ১৪শ’ কিলো ক্যালোরি চাহিদা থাকবে। সেজন্য আপনি ক্যালোরি কিছু ইফতারিতে, কিছু রাতের খাবারে আর কিছু সেহেরিতে রাখলেন। কাজেই সঠিক ভাবে রমজানে আপনি যদি রোজা করতে চান কোন শারীরিক জটিলতা মুক্ত থেকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই রাতে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

রমাজান মাসে সাধারণত আমরা আমাদের খাবার টেবিলে উৎসব দেখতে পাই। বিভিন্ন খাবারে আমাদের টেবিলটা ভরা থাকে। আমরা আসলে ভুলে যাই যে রমজান মাস সংযমের মাস। আমাদের খাবার টেবিলে সংযমের বিষয়টি দেখা যায় না। আমাদের খাবার টেবিলটা ভরা থাকে বিভিন্ন ধরনের অসাস্থ্যকর খাবারে।

আমরা আর একটা কমন ভুল করি যে সারাদিন রোজা থেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে যাই বলে ইফতারিতে একেবারে দুই-তিন গ্লাস পানি পান করে ফেলি। এটা যে আমাদের পাকস্থলীতে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেটা মাথায় থাকে না। আবার সেহেরিতেও আমরা একই ভুল করি। আমরা মনে করি যেহেতু কম সময় আছে একবারে অনেক পানি পান করে ফেলি। আমরা ধারণা করি এই পানিটা আমাদের পেটে অনেকক্ষণ থাকবে। কিন্তু এই ধারণাটা ভুল।

এজন্য আপনাকে খাবারে অবশ্যই পানি বহুল শাখ-সবজি, ফলমূল আছে, সেরকম খাবার খেতে হবে। তাহলে আমাদের শরীরে পানি রাখতে সাহায্য করবে এবং খুব সহজে তৃষ্ণার্ত হয়ে যাবো না। এগুলো মাথায় রাখলে কিন্তু আমরা সাধারণত কোনো ভুল ব্যতীত রমজান মাসে রোজা রাখতে পারবো।


আরও দেখুন: