জনগণের উদ্যোগে হর্নমুক্ত শহর
কোনো ধরনের সরকারি বাধ্যবাধকতা ছাড়া আইজল তৈরি হয়েছে শব্দদূষণ মুক্ত শহর হিসেবে
বাসা থেকে বের হয়েই দেখলেন তীব্র যানজট। সব গাড়ি এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। কোনো হর্ন নেই, যাত্রীদের তা নিয়ে কোনো অভিযোগও নেই।
ঢাকায় এমন সড়ক কল্পনাতীত হলেও বাংলাদেশের খুব কাছেই এমন একটি শহর রয়েছে, যেখানে এমন চিত্র নিত্যদিনের বাস্তবতা। সীমান্তবর্তী ভারতের মিজোরাম রাজ্যের রাজধানী আইজল হর্নমুক্ত হয়েছে জনগণের উদ্যোগে। খবর এনডিটিভি।
কোনো ধরনের সরকারি বাধ্যবাধকতা ছাড়া আইজল তৈরি হয়েছে শব্দদূষণ মুক্ত শহর হিসেবে। এটি ভারতের প্রথম হর্নমুক্ত শহরও। সেখানকার স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রায় পুরোটাই গড়ে উঠেছে শুধু জনগণের উদ্যোগে।
অথচ সড়কপথে ঢাকা থেকে আইজলের দূরত্ব মাত্র ৪২৮ কিলোমিটার। দুই শহরের শব্দদূষণ পরিস্থিতিতে যেন আকাশপাতাল পার্থক্য। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইজলের জনসংখ্যা ৩৫ লাখের কিছু বেশি। নিবন্ধিত গাড়ি রয়েছে দুই লাখের মতো। রাস্তায় যানজটও হয় নিয়মিত। কখনো কখনো হয়ত শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে এক-দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তবুও হর্নের কান ঝালাপালা করা শব্দ নেই।
আইনে নিষিদ্ধ নয়, নিজেদের ইচ্ছাতেই হর্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকেন আইজলের বাসিন্দারা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের একপাশ ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন গাড়ি নিয়ে। কারও ওভারটেক করার তাড়া নেই, কেউ লেনও বদল করেন না।
কেউ হর্ন দিলে, তার দিকে বাকিরা বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকান। স্থানীয় বাসিন্দা রবার্ট পাচাউ বলেন, ‘এখানকার লোকেরা খুবই ভদ্র ও সুশৃঙ্খল। রাস্তায় যানজট হলে আমরা বুঝতে পারি, সামনে কোনো সমস্যা হয়েছে। তাই হর্ন বাজালেও কাজ হবে না।’
মিজোরামে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা একটি সামাজিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকারও এখন নতুন নতুন নিয়ম ও আইন আনছে।
সরকারিসহ শহরের সব গাড়িরই মাসে তিন দিন রাস্তায় বের হওয়া নিষিদ্ধ। এটি নির্ধারণ করা হয় জোড়-বেজোড় লাইসেন্স নাম্বার অনুসারে। যেমন- কোনো গাড়ির নাম্বার যদি এক দিয়ে শেষ হয়, তাহলে মাসের ১, ১১ ও ২১ তারিখ সেটির রাস্তায় বেরোনো বন্ধ। আবার, গ্যারেজ থাকার প্রমাণ না দেখানো পর্যন্ত কেউ নতুন গাড়ির নিবন্ধন পান না।
সেখানকার ট্রাফিক বিভাগও অভিনব সব উপায়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ট্যাক্সি হলো শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। সেখানে সব ট্যাক্সিকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন একটি গ্রুপের রাস্তায় বেরোনো বন্ধ।
এছাড়া প্রতি বছর সাধারণত ডিসেম্বর মাসে ‘নো টলারেন্স উইক’ পালন করে মিজোরাম সরকার। ওই সপ্তাহজুড়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকা যানবাহনকে জরিমানা করা হয়।