শীতে ক্যান্সার রোগীদের যত্ন

ডা. নাজিরুম মুবিন
2024-01-16 12:03:13
শীতে ক্যান্সার রোগীদের যত্ন

ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যস্ত চিকিৎসক (ইনসেটে ডা. নাজিরুম মুবিন)

শীতকাল আমাদের অনেকের পছন্দের ঋতু তবে ক্যান্সার রোগীদের জন্য এই সময়টাতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন।

ক্যান্সার রোগ এবং এর চিকিৎসা দুই কারণেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে শীতকালে ক্যান্সার রোগীরা অল্পতেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। অন্যদের জন্য এটা সাধারণ অসুখ-বিসুখ হলেও ক্যান্সার রোগীদের জন্য এই রোগগুলি আর সাধারণ থাকে না। রোগী, রোগীর স্বজন এমনকি চিকিৎসকদেরও বেশ বেগ পোহাতে হয় ক্যান্সার রোগীর জ্বরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।

শীতকালে শরীরের তাপমাত্রা কমার একটি প্রবণতা থাকে। সুস্থ মানুষের শরীর তখন তাপমাত্রা বাড়িয়ে স্বাভাবিক পরিধির মধ্যে রাখে। তবে ক্যান্সার রোগীদের অনেকের শরীর পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাপমাত্রা বাড়াতে পারে না। একে হাইপোথার্মিয়া বলে। ক্যান্সারের কারণে শরীর শুকিয়ে যায়, ওজন কমে যায়, রক্ত স্বল্পতা, পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এর সবগুলি হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিছু কিছু কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাত ও পায়ের ঠান্ডা-গরমের অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। একে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বলে। এর ফলে রোগী তার অজান্তেই দীর্ঘ সময় ঠান্ডা তাপমাত্রায় থাকে।

শীতকালে সাধারণ মানুষের মতো ক্যান্সার রোগীরাও পানি কম পান করে। ফলে তারা পানিশূন্যতায় (ডিহাইড্রেশন) ভোগেন। অথচ বেশ কিছু কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা রোগীর কিডনিকে বিকল করে দিতে পারে।

শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকে আবার রেডিওথেরাপি ও কিছু মুখে খাওয়ার কেমোথেরাপি শুষ্ক ত্বককে আরো নাজুক করে দিতে পারে।

এই সমস্যাগুলো মোকাবেলায় শীতকালে ক্যান্সার রোগীদের প্রয়োজন বিশেষ যত্নের -

১. সব সময় পর্যাপ্ত শীতের পোষাক পরা। অবশ্যই হাতে ও পায়ে মোটা মোজা পরা। কেমোথেরাপির কারণে যাঁদের মাথার চুল কমে গেছে তারা অবশ্যই টুপি পরবে, কান ও মাথা ঢেকে রাখবে।

২. বাসার বাইরের কাজ দিনের বেলাতেই শেষ করতে হবে। বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।

৩. বেশি করে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে তবে ক্যাফেইনযুক্ত খাবার যেমন চা-কফি কম খাওয়া ভালো।

৪. নিয়মিত ময়েশ্চেরাইজার ব্যবহার করা, বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।

৫. খুব ঠান্ডা বা খুব গরম পানিতে গোসল না করে অল্প গরম পানি ব্যবহার করুন।
অন্যান্য সময়ের মতো যেকোন সমস্যায় আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। সবাই ভালো থাকবেন।

লিখেছেনঃ

ডা. নাজিরুম মুবিন
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 


আরও দেখুন: