ভ্যান গগ সিনড্রোম
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভ্যান গগ ছিলেন একজন প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগী (বামে লেখক)
আমরা যারা ভাবি সিজোফ্রেনিয়া, পাগল বা মানসিক রোগ হলেই জীবন শেষ আসলে তা নয়।
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেণ্ট ভ্যান গগ একদা তার কান কেটে তার প্রেমিকা'র (একজন পতিতা) হাতে তুলে দিয়ে বলেন এটা সযত্নে রেখে দিও। তার এরকম সেল্ফ হার্মে হতবিহ্বল প্রেমিকা। মারাত্মক রক্তক্ষরণ থেকে কোন মতে সে যাত্রায় প্রাণ রক্ষা হয় ভ্যান গগ এর।
আসলে ভ্যান গগ ছিলেন একজন প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগী । এ রোগ নিয়েও তিনি প্রায় আড়াই হাজার চিত্র কর্ম আঁকেন।
জীবদ্দশায় তাঁর কোন চিত্রকর্মই বিক্রি হয়নি কেবল একটি ছাড়া, সেটা ও বিক্রি হয় খুব অল্প দামে। তা দিয়ে তিনি ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করেন।
দারুণ অভাবে দিন কাটে তাঁর। মানসিক হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি থেকেও তিনি অনেক চিত্রকর্ম আঁকেন। তাঁকে সাইকিয়াট্রিস্টরা সে ব্যবস্থা করে দেন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
ভ্যান গগের কান কাটার ঘটনার উপর ভিত্তি করে সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের 'সেল্ফ হার্ম' করা'কে বলা হয় 'ভ্যান গগ সিনড্রোম'।
গেলো বছর ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আঁকা একটি ছবি নিলামে বিক্রি হয় একশোতো তিরিশ কোটি টাকায়। তার আরো বেশ কিছু চিত্রকর্ম যেমন 'স্টারি নাইট', 'সান ফ্লাওয়ার' যেগুলোর মুল্য শত শত কোটি টাকা।
বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী জন ন্যাশ ছিলেন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী। সাইকিয়াট্রিস্ট দের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় থেকে সিজোফ্রেনিয়া রোগ নিয়েই জন ন্যাশ অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেন। তাঁকে বলা হয় সর্বকালের সেরা অর্থনীতিবিদ।
আসুন সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের প্রতি যত্নবান হই। তাদের মেধা বেকাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।
লেখকঃ
ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি), এমফিল (সাইকিয়াট্রি), বিসিএস।
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।
(ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ)
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।