শিশুদের রোগ এইচএফএমডি
শিশুদের রোগ এইচএফএমডি (ইনসেটে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ডা. লিনা ফ্লোরেন্স
ইদানিং এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়। Handfootmouth disease (HFMD) রোগটি এক ধরনের ভাইরাস (coxsackie virus) রোগ। ছোট ছোট পানি ভরা ফোস্কা (blister) হাতে পায়ের তালুতে, ঠোঁটের চারপাশে, মুখের ভেতর, কনুই, হাঁটুতে এমনকি ডায়াপার এরিয়াতে দেখা যায়, দেখতে চিকেন পক্স বলে ভ্রম হয়। চিকেন পক্সের মতো সারা শরীরে হয় না।
এই ব্লিসটার হওয়ার আগে দুদিন জ্বর, সাথে গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা হতে পারে ,এরপর এই rash উঠা শুরু হয়, ছড়াতে থাকে। গোটা গুলোতে খুব চুলকানি হবে, পেইনফুল হতে পারে, খেতে অনেক কষ্ট হবে। এই রোগ ৭-১০ দিনে সেরে যায়। এ রোগে জটিলতা খুব কম হয় । রোগ স্নায়ু বা ব্রেইন আক্রান্ত হলে খিঁচুনি, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, ঘাড় পিঠ শক্ত হওয়া, প্যারালাইসিস বা অজ্ঞান হতে পারে।
এ রোগটি ছোঁয়াচে, আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি, লালা, অথবা ফেটে যাওয়া ফোস্কার সংস্পর্শে আসলে অন্যদের এ রোগ সহজে হবে। এজন্য এ রোগে আক্রান্ত হলে ৭-১০ দিন ঘরে আইসোলেশনে থাকা উচিত।
রোগটা ভাইরাসজনিত হওয়ায় এন্টিবায়োটিকের কোন প্রয়োজন নাই। এন্টি ভাইরাল ওষুধের ও প্রয়োজন নাই।
উপসর্গগুলোর চিকিৎসা দিলেই যথেষ্ট।
জ্বর বা মুখের ভেতরে ঘায়ের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রুফেন ওষুধ সঠিক ডোজে দিতে হবে (এস্পিরিন বা ডাইক্লোফেন দেয়া যাবে না।
বাচচার হাইড্রেশনের জন্য তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে কারন শক্ত খাবার খেতে কষ্ট হবে মুখে ঘা বেশি হলে।
তরল খাবার যেমন মিষ্টি ফলের রস( কমলা, মালটা আংগুর লেবু বা টক জাতীয় ফল বাদে), দই, ঠান্ডা দুধ, ঠান্ডা ঝালহীন সুপ, পানি বার বার খাওয়াতে হবে।
প্রতিদিন কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়ে গোসল করাতে হবে, আলতো করে গায়ে সাবান দিতে হবে তাতে ফোস্কা ফেটে না যায়।
ফোস্কাগুলোতে পেট্রোলিয়াম জেলি, জিংক অক্সাইড পেস্ট,বা ক্যালামিন লোশন লাগাতে হবে। অতিরিক্ত চুলকালে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ১ শতাংশ hydrocortisone cream লাগানো যাবে।
এপসম সল্ট উইথ এসেন্সিয়াল ওয়েল পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকাবে ও আরাম হবে।
নখ কেটে রাখতে হবে যেন চুলকিয়ে গোটা না ফাটে।
বড় বাচ্চাদের পানি ও লবণ দিয়ে গার্গল করাতে হবে দু তিনবার।
এনটাসিড সিরাপ দেয়া যেতে পারে মুখের ভেতর ব্যথা কমাতে।
মাইকোওরাল জেল বা নিসটাট সাসপেনশনের কোন রোল না ।
বাচ্চার পানিশূন্যতা রোধ করুন, পুষ্টিকর তরল খাবার দিন ও বাচ্চার শরীর ও নখ পরিষ্কার রাখুন , মুখের ভেতরে পরিষ্কার রাখুন, ডায়াপার কম ব্যবহার করুন, বাচ্চার ও নিজের হাত সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখুন।
এই রোগে আতংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়াবেন না, প্রয়োজনে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ৭-১০ দিনে বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে।
লেখকঃ
লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ডা. লিনা ফ্লোরেন্স
শিশু পরিপাকতন্ত্র ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।