প্লাসেন্টা প্রিভিয়া : গর্ভবতীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া : গর্ভবতীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক
সেদিনের একটি অপারেশন শেষ হতে সময় লাগলো টানা আড়াই ঘণ্টা। এই অপারেশন নিয়ে আমাদের বারডেমের গাইনি এন্ড অবস ইউনিটের সবার দৌড়ঝাঁপ কম হয়নি।
রোগী সেন্ট্রাল 'প্লাসেন্টা প্রিভিয়া' সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন আমাদের ইউনিটে। প্লাসেন্টা হলো গর্ভফুল এবং প্রিভিয়া মানে সামনে। গর্ভফুলের মাধ্যমে বাচ্চা জরায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। সাধারণত গর্ভফুলের অবস্থান জরায়ুর ভেতরে ওপরের দিকে। এই গর্ভফুল যদি কোন কারণে জরায়ুর নিচের দিকে জরায়ুমুখে লেগে থাকে, তখন তাকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে।
গবেষণার তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি ২০০ গর্ভবতী মায়েদের মাঝে ২জনের অবস্থা এমন হতে পারে। এ অবস্থা কম দেখা দিলেও গর্ভবতীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি অবস্থা।
আমাদের বারডেম হাসপাতালে প্রতি মাসেই কয়েকজন রোগী এই সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। অপারেশনের সংখ্যা হিসেবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে এই সমস্যায় আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং তা নিয়মিত বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশে এই সমস্যা নিয়ে নির্দিষ্ট হাতেগোনা দুএকটা আর্টিকেল ছাড়া তেমন কোন রিসার্চ আমার চোখে পড়েনি।
এ সমস্যায় গর্ভবতী মায়ের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি বাচ্চারও ক্ষতি হতে পারে, মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে মা শকে চলে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে। এর পাশাপাশি বাচ্চা কম ওজন, অপরিপক্ব অবস্থায় জন্ম নিতে পারে। অনেকক্ষেত্রে মায়ের পেটেই বাচ্চার মৃত্যু ঘটতে পারে।
কেন এমন অবস্থা হতে পারে তা এখনো অজানা তবে মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি, পূর্বে সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়ে থাকলে, জরায়ুতে পূর্বে কোন অপারেশন হলে, ধূমপান এবং মাদকদ্রব্য সেবন করলে ইত্যাদি কারণে এমন অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া প্রতিরোধের সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই এবং তবে মেডিকেল সায়েন্সের আধুনিক সব টেস্টের ফলে পূর্বেই এ অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব তাই গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত চিকিৎসকের চেকআপে থাকা জরুরি।
এই অপারেশনে মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় আগে থেকেই রক্ত প্রস্তুত রাখাসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ গাইনি সার্জনের সমন্বয়ে অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে হয়। এখানে আরো থাকে ইউরোলজিস্ট, সিনিয়র নার্সসহ পুরো একটা সার্জারি টিম।
সফল এই অপারেশন করেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি এন্ড অবস ডিপার্টমেন্টের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. রুনা লায়লা ম্যাডাম এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. মাসুদা ইসলাম খান ম্যাডাম। এছাড়াও ছিলেন এনেস্থেশিয়া বিভাগের অ্যাাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. রায়হান উদ্দিন স্যার এবং গাইনি এন্ড অবস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টারার ডা. লুসান্তা মল্লিক। সহকারী হিসেবে আরও ছিলেন ডা. ফাইমা রুপা, ডা. মাইসা মোকাররাম, ডা. মনিকা।
লেখক:
ডা. কামরুজ্জামান নাবিল
ইন্টার্ন, বারডেম।
সাবেক শিক্ষার্থী,
ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।