মাহে রমজান, দাবদাহ এবং হিট স্ট্রোক
ডা. কামরুল হাসান সোহেল
সবাইকে রামাদান করিমের শুভেচ্ছা। বর্তমানে দেশজুড়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার দাবদাহ, কোথাও তীব্র দাবদাহ বইছে। গ্রীষ্মকালে রোজা এমনিতেই দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ সময় ধরে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয় বলে শরীরে কিছুটা পানিশূন্যতা দেখা দেয়া স্বাভাবিক। তার ওপর এই তাপদাহ জীবনকে করে তুলছে দুর্বিষহ। রোজা রেখে এই তাপদাহে স্বাভাবিক কাজকর্ম করাই কঠিন। যারা ঘরের বাহিরে দীর্ঘ সময় পরিশ্রমের কাজ করে তাদের শরীরে দেখা দিতে পারে মাঝারি থেকে তীব্র পানিশূন্যতা, হতে পারে হিট স্ট্রোকও।
হিট স্ট্রোক কি?
হিট স্ট্রোক হচ্ছে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হওয়া এক প্রকার জটিলতা। স্বাভাবিক দেহের তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট। যদি এটি ১০৪° ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তখনি হিট স্ট্রোক হতে পারে।
হিট স্ট্রোক এক প্রকার মেডিকেল ইমার্জেন্সি। যেখানে সাথে সাথে চিকিৎসা না দেয়া হলে রোগি মৃত্যুবরণও করতে পারেন। রোগিকে গরম থেকে সরিয়ে এনে তার দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা হিট স্ট্রোকের চিকিৎসার একটি দরকারি ধাপ।
হিট স্ট্রোকের কারণঃ
পানিশূন্যতা হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রচন্ড গরমে দেহে পানি কমে গিয়ে যেন পানিশূন্যতা না হয় তা নিশ্চিত করা ও বেশি গরমে ভারি শারীরিক পরিশ্রমে না জড়ানোই উচিত।
কারা হিট স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়?
ছোট বাচ্চা, বয়স্ক লোক, ভারী পরিশ্রমের কাজ করলে, এছাড়া দিনমজুরদের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই ভয়াবহ, বাচ্চাদের দেহের তাপ নিয়ন্ত্রন করার সিস্টেম ডেভেলপড না হওয়ায় তাদের হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি। প্রচন্ড গরমে বাচ্চাকে বাহিরে তীব্র রোদের মাঝে খেলাধুলা করতে দিবেন না, স্কুল, কলেজে যাওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করতে বলবেন। বৃদ্ধদেরও দেহের তাপ নিয়ন্ত্রন করার সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, ফলে তারাও হিট স্ট্রোক এর জন্য ঝুঁকিতে থাকেন।
শরীরের তাপমাত্রা অসহনীয় অবস্থায় গেলে যেসব জটিলতা দেখা যায়ঃ
মাথা ঝিম ঝিম করা, বমি করা, অবসাদ, দুর্বলতা, মাথা ব্যাথা, মাংশপেশির খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা
হিট স্ট্রোকে যেসব লক্ষণ দেখা যায়ঃ
দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি, ঘামের অনুপস্থিতি, চামড়া খসখসে লাল হয়ে যাওয়া, পালস (শিরার গতি) বেড়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট, হ্যালুসিনেশন, কনফিউশন, অশান্তি করা, খিঁচুনি হতে পারে, কোমায় ও চলে যেতে পারে রোগী।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করবেনঃ
আক্রান্ত লোকটিকে ছায়াযুক্ত একটি জায়গায় নিয়ে আসুন, গায়ের ভারি কাপড় খুলে দিন, তার গায়ে ঠান্ডা পানি ঢালুন। তাকে সম্ভব হলে ফ্যানের নিচে বা এসি রুমে নিয়ে আসুন। এতে গায়ের ঘাম উড়ে যাবে। সম্ভব হলে তার বগল ও রানের খাঁজে বরফ দিন। একটি থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখুন এবং ১০১-১০২° ফারেনহাইটে নেমে আসা না পর্যন্ত তাকে ঠান্ডা করা চালিয়ে যান। মনে রাখবেন, ঘামের সাথে দেহের লবন বেড়িয়ে যায়, তাই দুর্বল লাগলে খাবার স্যালাইন খাওয়ান।
সবাই এই তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করবেন, শরীরকে পানিশূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে রোজা রেখে ইফতারের সময় বেশি ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে শরবত, জুস বা তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাবেন, রসালো ফল যেমন তরমুজ খেতে পারেন।
সবাই তাপদাহ এড়িয়ে চলুন, হিট স্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন, সুস্থ থাকুন সবাই।
লেখক:
ডা. কামরুল হাসান সোহেল
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বরুরা, কুমিল্লা।