ঘুম না হলে কি করবেন?
ঘুম না হলে কি করবেন? লিখেছেন ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মন্ডল
ঘুম না হলে কি করবেন....
কেস হিস্ট্রি ১- মিসেস নাজনিন ৩৫ বছর বয়স, ঘুম কম হয়, এই কারনে ডাক্তারের কাছে এসেছেন। তিনি সকাল থেকে অনেক ব্যাস্ত থাকেন। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে মেয়েকে গাড়ীতে করে স্কুলে নিয়ে যান। স্কুল থেকে ফিরে বাসায় গোসল করে চা খান। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ১ টার দিকে আবার স্কুলে যান, মেয়েকে আনতে। দুপুরে খেয়ে ২ ঘন্টা বিশ্রাম নেন। এরপর মেয়েকে নিয়ে গানের স্কুলে যান। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে উনি অনেক ক্লান্ত হয়ে যান। এরপর কফি খান, বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখেন। রাতের খাবার খান, টিভি দেখেন। কিন্তু তার ঘুম ধরে না, সারারাত ছটপট করেন, ভোরের দিকে কিছুটা ঘুম হয়। ঘুম থেকে ৮টায় উঠেন।
প্রশ্ন : মিসেস নাজনিন ঘুম হচ্ছে না কেন? সমাধান কি?
কেস হিস্ট্রি ২- মোঃ নাজমুল ৭০ বছর বয়স, ডাক্তারের কাছে এসেছেন খাবার রুচি নেই আর ঘুম হয় না। তিনি গ্রামে থাকেন। সাধারনত সন্ধ্যার পর নামাজ পড়ে রাতের খাবার খান। এরপর এশার নামাজ পড়ে তিনি বিছানায় যান। বিছানায় যাবার কিছুক্ষন পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন, কিন্তু মাঝরাতে তার ঘুম ভেংগে যায়। আর ঘুম ধরে না।
প্রশ্ন-মোঃ নাজমুল এর ঘুম হচ্ছে না কেন? সমাধান কি?
ঘুম কেন দরকার?
আমরা সারাদিন কাজ-কর্ম করার পরে, শরীরে ক্লান্তি আসে। সে ক্লান্তি দূর করার জন্যই ঘুম দরকার। সোজা করে বলা যায়, আমাদের ইঞ্জিন অনেকক্ষণ ধরে চললে, হিট হয়ে যায়। ইঞ্জিন ঠান্ডা করার জন্যই ঘুম দরকার।
আমার মনে হয়, ইদানিং ঘুমের ঔষধ খাবার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। অনেককেই দেখি প্রতিদিন রাতে ঘুমের ঔষধ খান, বছরের পর বছর ধরে খাচ্ছেন। এটা ঠিক না।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ২৪ ঘন্টায় ৭-৯ ঘন্টা ঘুম দরকার, আর বয়স্কদের (৬৫ বছরের উপরে) ৭-৮ ঘন্টা। কোন রুগীর ঘুম না হলে আমাদেরকে বিস্তারিত ইতিহাস নিতে হবে।
আমার মতে ঘুম ভালো না হবার কারণগুলো হল-
১। মানসিক দুশ্চিন্তা
২। কায়িক শ্রম না হওয়া
৩। চা/কফি বেশি খাওয়া
৪। দিনের বেলা ঘুমানো
৫। শরীরে যে কোন ধরনের ব্যাথা যেমন-কোমড়, ঘাড়, জয়েন্টে ব্যাথা থাকলে ঘুম হয় না।
৬। শোবার রুমে টিভি থাকা
৭। ফেস বুক (বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেস বুক দেখা)
৮। Thyrotoxicosis (হরমোন জনিত রোগ) এই রোগ অনেক কম হয়।
মানসিক দুশ্চিন্তা থাকলে, যে কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার সমাধান করতে হবে। যেমন- যার বিয়ে হচ্ছে না দেখে টেনশন, তাকে বিয়ে দিতে হবে। যার চাকরী হচ্ছে না দেখে টেনশন, তাকে বুঝতে হবে চাকরী পাওয়া সহজ না ইত্যাদি।
ঘুমের ঔষধ ছাড়া ঘুমানোর জন্য নিচের বিষয়গুলো চেষ্টা করতে পারেন-
১। সন্ধ্যার পর ৩০ মিনিট জোরে জোরে হাটবেন যেন শরীরে ঘাম হয়। (এটা কায়িক শ্রম এর জন্য)
২। বিকেলের পর চা/কফি খাবেন না।
৩। ঘুমাতে যাবার ঠিক পূর্বে বিছানায় যাবেন। (সন্ধার পর থেকে বিছানায় গেলে, একঘেয়েমির কারনে ঘুম নাও ধরতে পারে, সারা দিন যদি কেউ বিছানা না পায়, রাতে বিছানায় গেলেই তার ঘুম ধরবে)।
৪। দিনের বেলা ঘুমানো যাবে না।
৫। বেড রুমে টিভি থাকা যাবে না। টিভির জন্য আলাদা রুম থাকতে হবে (যেখানে বিছানা নেই)।
৬। বিছানায় যাবার পর ফেস বুক ব্যাবহার করা যাবে না।
কেস হিস্ট্রির উত্তর
কেস নং ১- মিসেস নাজনিন এর ঘুম না হবার কারণ- কায়িক শ্রম নেই, দুপুরে ঘুমানো/বিশ্রাম নেয়া, সন্ধার পর কফি খাওয়া আর সন্ধ্যা থেকেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখা। উনার জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন করলেই উনার ঘুম হবে।
কেস নং ২- মোঃ নাজমুল এর আসলে পর্যাপ্ত ঘুম হয়, কারন উনি রাত ৮ তার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন, আর রাত ৩ টার দিকে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, সুতরাং ৭ ঘন্টা ঘুম হয়।
আর মনে রাখতে হবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের কায়িক শ্রমের পরিমান কমে যায়, তাই ঘুমও কমতে থাকে।
ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মন্ডল
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতাল