স্ট্রোক : এক দুর্বিষহ যন্ত্রণার নাম
ডা. মো. তরিকুল হাসান
স্ট্রোক! এক দুর্বিষহ যন্ত্রণার নাম।
স্ট্রোককে আমরা বলি সেরেব্রো-ভাসকুলার এক্সিডেন্ট!
মোটরসাইকেল চালানো শুরুর আগেই হেলমেট মাথায় দিয়ে রাখলে এক্সিডেন্টে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। স্ট্রোক একটা এক্সিডেন্ট! হয়ে গেলে তেমন কিছু করা যাবে না আর তাই আগেই সতর্ক হওয়া উচিত।
আসুন নিজেকে প্রশ্ন করি-
আমার কি উচ্চ-রক্তচাপ আছে? আমার বংশে কি উচ্চ-রক্তচাপ আছে? আমার উচ্চ-রক্তচাপ থাকলে তা কি নিয়ন্ত্রণে আছে? আমি কি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি?
-উচ্চ-রক্তচাপ একটি নিরব ঘাতক। সতর্ক হোন।
আমার কি ডায়াবেটিস আছে? আমার বংশে কি ডায়াবেটিস আছে? আমার ডায়াবেটিস কি নিয়ন্ত্রণে আছে?
-ডায়াবেটিস অনেক শারীরিক জটিলতার কারণ। সতর্ক হোন।
আমার কি চর্বিজনিত অসুবিধা আছে? আমার ওজন কি অনেক বেশি?
-আপনার বিএমআই (না জানলে BMI সম্বন্ধে সার্চ করুন।) মাপুন। লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করুন।
আমি কি ধুমপান বা মদ্যপান করি?
-পরিত্যাগ করুন।
আমি কি নিয়মিত ব্যায়াম করি?
-ব্যায়ামে দেহমন সুস্থ থাকে।
FAST কি?
স্ট্রোক রোগী দ্রুত সনাক্তকরণ ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌছানোর জন্য FAST নামে একটি প্রাথমিক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। আসুন জেনে নিই এটি সম্বন্ধে।
F- Face > ভালভাবে খেয়াল করুন রোগীর মুখ বেঁকে যাচ্ছে কিনা? তাকে হাসতে বলুন। হাসলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। স্ট্রোকের রোগীদের মুখের কোন অংশ বেঁকে যেতে পারে। মুখের খাবার বা লালা মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে।
A-Arm > তার শরীরের কোন অংশ দুর্বল হয়ে গেছে কিনা লক্ষ্য করুন। দুই হাত উপরে তুলতে বলুন। দুই হাত কিংবা দুই পায়ে শক্তির তারতম্য খেয়াল করুন।
S- Speech > রোগীর সঙ্গে কথা বলুন। তার কন্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছে কিনা লক্ষ্য করুন। স্ট্রোকের রোগীর কথা বলতে সমস্যা হতে পারে।
T- Time > স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহুর্ত মুল্যবান। তাই সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত সাহায্যের জন্য কল করুন। রোগীকে উচ্চতর সেবাকেন্দ্রে দ্রুত পৌছে দিন। কর্তব্যরত চিকিৎসককে সহায়তা করুন।
অজ্ঞান রোগীর যত্ন :
স্ট্রোকে সবসময় রোগী অচেতন হন না। তবে অজ্ঞান বা মুখে খেতে না পারলে বা পাশ ফিরতে না পারলে বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
অজ্ঞান রোগী পাশ ফিরতে পারেন না। ফলে শরীরের নিজস্ব চাপে গ্র্যাভিটির জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশে এক ধরনের ঘা হয়। একে বেড সোর বলে। এই ঘা খুব মারাত্মক অসুখ। এই ঘা প্রতিরোধ করার জন্য নিচের ব্যবস্থা প্রতিটি অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে নিতে হবে। অন্যথায় রোগীর অসুস্থতা ও মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
১. দুই ঘন্টা পরপর রোগীর কাত পরিবর্তন করে দিতে হবে।
২. এক ধরনের বিশেষ বিছানা পাওয়া যায়। একে নিউম্যাটিক বেড বলা হয়। এই বিছানা ব্যবহার করলে বেড সোরের সম্ভাবনা কমে যায়।
অজ্ঞান রোগীর খাওয়ার জন্য নাকের ভেতর দিয়ে এক ধরনের নল পরানো হয়। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে নিচের নিয়ম মেনে চলতে হবে-
১. রোগীকে বসিয়ে খাওয়াবেন।
২. খাওয়ানোর পরও ২০ মিনিট বসিয়ে রাখবেন।
অজ্ঞান রোগীর নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর প্রস্রাব পায়খানা হচ্ছে কিনা খোজ রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রস্রাবের নল ও পায়খানা হওয়ার জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
ইন্টারভেনশন নিউরোলজি :
দেশের সকল বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টারভেনশন নিউরোলজি বিভাগ চালু করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের অনুরোধ করছি।
'স্ট্রোক' সম্পর্কে নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। সচেতন হোন ও সুস্থ্য থাকুন।
ডা. মো. তরিকুল হাসান
৩০/১০/২২
ময়মনসিংহ।