হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার
হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে
হাইপোথাইরয়েডিজমের ‘হাইপো’ শব্দের অর্থ কম। কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন তৈরি করলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।
হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা বোঝার কিছু লক্ষণ হলো থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বিপাকক্রিয়া দেরিতে হয়। তবে প্রথম লক্ষণ হলো ওজন বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া রয়েছে—
> অবসাদগ্রস্ততা, ঘুমঘুম ভাব
> ঠান্ডা একদম সহ্য করতে না পারা
> হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া
> উচ্চরক্তচাপ
> বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া
> গলগণ্ড দেখা যাওয়া
> চামড়া, চুল শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়া
> কানে কম শোনা বা একদমই না শোনা
> স্নায়ু ও মাংসপেশী নির্ভর রিফ্লেক্স কমে যাওয়া
> মাংসপেশীতে প্রচণ্ড চাপ ও ব্যথা অনুভব করা
> অনিয়মিত মাসিক এবং মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত
> মুখ ও পা ফুলে যাওয়া
> কোষ্ঠকাঠিন্য
> বন্ধ্যাত্মতা
> যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া
> স্বরের কোমলতা কমে যাওয়া, কণ্ঠ ভারী ও কর্কশ শোনানো
> পেটে পানি জমা
> স্মৃতিশক্তি লোপ ও বিষন্নতা ইত্যাদি।
হাইপোথাইরয়ডিজমের জন্য পুষ্টি উপাদান
থাইরয়ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এগুলো হলো—
আয়োডিন: আয়োডিন একটি অপরিহার্য খনিজ, যা থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে। আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে অপর্যাপ্ত আয়োডিন গ্রহণ বিশ্বব্যাপী হাইপোথাইরয়ডিজমের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এ জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে।
সেলেনিয়াম: সেলেনিয়াম হলো আরেকটি খনিজ, যা থাইরয়েড স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রয়োজন। এটি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে থাইরয়েডকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাদাম, টুনা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম ও শষ্যদানা।
জিঙ্ক: পর্যাপ্ত জিঙ্ক খাদ্য তালিকায় না থাকলে থাইরয়েড ফাংশন এবং স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই ডায়েটে জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার যথেষ্ট পরিমাণে থাকাটা অপরিহার্য। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদাম, শিম, মাশরুম, চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।
ভিটামিন ডি: হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকলে তা থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যেহেতু ভিটামিন ডি অনেক খাবারে ঘণীভূত হয় না। তাই এর পরিপূরক প্রয়োজন।
ভিটামিন বি ১২: হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা যায়। সর ছাড়া দুধ, মুরগি, ডিম, টুনা মাছ, পনির ও বিভিন্ন রকম ডালে ভিটামিন বি ১২ আছে। এসব খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রার ঘাটতি থাইরয়েডের কর্মহীনতার সঙ্গে যুক্ত এবং হাইপোথাইরয়ডিজম হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সামুদ্রিক মাছ, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ, বিভিন্ন রকম বাদাম ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এগুলো নিয়মিত খেতে হবে।
এছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন হাইপোথাইরয়ডিজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উদাহরণ। মূলত স্বাস্থ্যকর থাইরয়েড ফাংশনের জন্য অনেক ভিটামিন এবং খনিজ প্রয়োজন। হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন পুষ্টি ও পরিপূরকের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং এদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে।