শিশুর জন্য ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, কী করবেন

ডা. নাঈমা সুলতানা
2022-09-20 14:04:58
শিশুর জন্য ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, কী করবেন

এনএস-১ নামে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা অবশ্যই জ্বর আসার ৪৮ ঘণ্টা মধ্যে করতে হবে

অন্যান্য বছর জুন থেকে ডেঙ্গু শুরু হয়, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর একটু দেরিতে শুরু হয়েছে এবং প্রকোপটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। প্রত্যেক দিন প্রচুর সংখ্যক রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু। শিশুরা ডেঙ্গু কেন, কোনো রোগের লক্ষণই সঠিকভাবে বলতে পারে না বলে ঝুঁকি বেশি হয়।

এই মুহূর্তে সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। সামান্য অবহেলায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এ জন্য অভিভাবকদের বাড়তি সতর্ক থাকবে হবে।

একটি শিশু হয়ত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে সাধারণ উপসর্গগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, শরীরে ব্যথার উপসর্গ থাকছে না। কিন্তু শিশুর ১০২ ডিগ্রির উপর জ্বর থাকলে, এসব উপসর্গ ছাড়াও পরীক্ষা করতে হবে।

পরীক্ষার ফলে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে- শিশুটির আদৌ ডেঙ্গু ছিল কিনা? আর এনএস-১ নামে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা অবশ্যই জ্বর আসার ৪৮ ঘণ্টা মধ্যে করতে হবে। সঙ্গে সিবিসি করে নিলে চিকিৎসা দিতে আরও সুবিধা হবে।

আমরা অনেক সময় দেখি, সন্তানের জ্বর আসার পর অভিভাবকরা একটি ভুল করে থাকেন। তারা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে দুই-তিন অপেক্ষা করেন। এরপর যখন আসেন, শিশুর শারীরিক জটিল বেড়ে যায।

সত্যি বলতে, এই দুই-তিন দিনের মধ্যে শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকলে, তার অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেয়। প্লাজমা লিকেজ হয়, রক্তচাপ নেমে যায়। একদমই খেতে পারে না। এটি খুবই খারাপ লক্ষণ।

মোটামুটি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হলো-  তীব্র জ্বর, জ্বরের সঙ্গে ঘাড়, গা, হাত-পা ব্যথা করে। অন্যান্য জ্বরে শিশুদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরে রক্তচাপ নেমে যায়। সমস্যা হলো শিশুদের রক্তচাপ খুব সহজে মাপা যায় না। কারণ, সবার বয়স সমান নয়, সবার উচ্চতা সমান নয়, সবার ওজন সমান নয়। তাই সবার জন্য ব্লাড প্রেসার মেজারমেন্ট সমান হয় না।

বিপি মেশিনের কাফ, সেটা বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। ছোট সাইজের কাফ দিয়ে নবজাতক অথবা এক বছরের ছোট শিশুর বিপি মাপা যায়। বিভিন্ন সাইজের কাপ থাকে। যেমন- ৪, ৬, ৯। সঠিক বয়সে সঠিক সাইজের কাফ দিয়ে শিশুদের বিপি মাপতে হবে। একটা নির্দিষ্ট চার্টে ফেলে দেখতে হবে যে তার বিপি ঠিক আছে কিনা।

রক্তচাপ ঠিক না থাকলে রোগী খুব দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে। এর ফলে রোগীর শরীরের ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রক্তক্ষরণ হবে, যেটি আমরা বাইরে থেকে দেখতে পারব না। দ্রুতই শিশুর অবস্থা খারাপ হবে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এ জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে সবার আগে যত দ্রুত সম্ভব ডেঙ্গু নিশ্চিত হতে হবে। এরপর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আর অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ালে বিপদ আরও বেড়ে যেতে পারে।


আরও দেখুন: