রোজা রাখা কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কেন
ফ্যাটি লিভারের রোগী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য রোজা রাখা খুবই উপকারী
পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রোজা রাখা ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়। অনেকেই ভেবে থাকেন, তিনি রোগে আক্রান্ত, রোজা রাখবেন কিভাবে?
আসলে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কিছু কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রোজা রাখলে ঝুঁকির কারণ হতে পারে তার শরীরের জন্যই। এ রকম রোগীর জন্য রোজা জরুরি নয়, আমরাও রাখার বিষয়ে তাদের নিরুৎসাহিত করে থাকি।
যাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ
> হঠাৎ লিভার প্রদাহ বেড়ে যায়, জন্ডিস বৃদ্ধি পায়, বমি হয় বা খেতে পারে না, এমন রোগীদের রোজা রাখলে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। এজন্য আমরা তাদের রোজা রাখার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করি।
> যারা দীর্ঘদিন জটিলতায় ভুগছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের পেটে পানি চলে আসে, দীর্ঘ ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদের জন্যও রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। অবশ্য লিভার ক্যান্সারের রোগীদেরও রোজা রাখার বিষয়ে আমরা নিরুৎসাহিত করি।
> উপসর্গযুক্ত জন্ডিস বা একিউট হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ।
> রক্ত বমি অথবা কালো পায়খানা হয়েছে এমন ব্যক্তির রোজা রাখা উচিৎ নয়।
> খাদ্যনালীতে ব্যান্ড বা ইভিএলের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছে, যাদের কথাবার্তা বা আচরণে অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে, তাদেরও আমরা রোজা না রাখার পরামর্শ দেই।
> ডায়াবেটিস আছে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকলে রোজা না রাখাই ভালো। রক্তে সুগারের মাত্রা কমে গেলেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে থাকে। এতে মুহূর্তে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
> লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের লিভারের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যারা রোজা রাখতে পারবেন
> লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন এবং উপরে উল্লেখিত লক্ষণসমূহ নেই, তারা অনায়াসে রোজা রাখতে পারবেন।
> ফ্যাটি লিভারের রোগী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য রোজা রাখা খুবই উপকারী। রমজানের বাইরেও তারা মাঝেমধ্যে রোজা রাখলে শরীরের জন্য ভালো হবে।
> যারা হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত, তাদের জন্যও রোজা উপকারী।
> লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ওইসব ব্যক্তি, যাদের লিভার স্বাভাবিকভাবে কার্যক্ষম রয়েছে।
> লিভার ট্রান্সপ্লান্ট গ্রহীতারা দক্ষ লিভার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে রোজা রাখতে পারবেন।
> গিলবার্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত সিরাম বিলিরুবিন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে রোজা রাখতে পারবেন।
লেখক: ডা. এএসএম সাদেকুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
লিভার বিভাগ, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল