ভাস্কুলার টিউমার কী, চিকিৎসায় করণীয়
টিউমার সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা না গেলে রিকারেন্স ঠেকানো যাবে না
মেরুদণ্ডের রক্তনালীতে কোনো টিউমার হলে সেটিকে আমরা ভাস্কুলার টিউমার বলি। প্রকারভেদ করার সময় আমরা কিন্তু সবগুলো টিউমারের নাম বলিনি। কারণ এটিকে সুনির্দিষ্টভাবে টিউমার বলা হয় না।
এটি একটি ভাস্কুলার লেসন। এটিকে স্পেস অক্যুপায়িং লেসন বলা হয়। তাই মেরুদণ্ডের টিউমারে এ রোগের কথা সরাসরি বলা হয় না। কিন্তু স্পেস অক্যুপায়িংয়ের কথা এলে ভাস্কুলার লেসনগুলোর কথা বলতে হবে।
আর্টারিওভেনাস ম্যালফরমেশন বা এভিএম এটি ইন্ট্রা-ড্যুরাল এক্সট্রা-ম্যাডুলারি রিজিওনে পাওয়া যায়। আবার ইন্ট্রা-ম্যাডুলারি কম্পার্টমেন্টেও পাওয়া যেতে পারে যদি এটি ভেতরে গিয়ে ফিস্টুলার মতো কিছু উৎপন্ন করে।
এমনকি ভাস্কুলার কিছু টিউমার যেমন, হেমানজিওব্লাস্টোমাস, অ্যামানজিওমা এক্সট্রা-ড্যুরালেও পাওয়া যায়। ফলে এ হেমানজিওমা যখন টিউমেরাস আকার ধারণ করে, তখন এটি মেরুদণ্ডের টিউমারের মতোই আচরণ প্রকাশ করে। ফলে ভাস্কুলার লেসন আলাদা এনটিটি হলেও স্পেস অক্যুপায়িং লেসন হিসেবে এটিকে মেরুদণ্ডের টিউমারের মধ্যে ধরা হয়।
নিউরো সার্জারির ভিন্ন বিভাগ হলো নিউরোভাস্কুলার। এটি বর্তমানে খুবই সম্ভাবনাময় বিভাগ এবং অনেকেই এটি নিয়ে কাজ করছেন। এগুলোর ক্ষেত্রে সার্জারি এবং ওয়ে অব ট্রিটমেন্ট একটু ভিন্ন। ভাস্কুলার লেসন শনাক্ত করা গেলে শুধু আমরা এমআরআইতে সীমাবদ্ধ থাকি না। তখন সিটি অ্যানজিওগ্রাম, এমআর অ্যানজিওগ্রাম অথবা ডিএসএ’র মতো আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
এ অ্যানজিওগ্রামগুলো করলে অনেক সময় ফিডার ভেসেলগুলোও বুঝা যায় যে, এটি কোথা থেকে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি আর্টারিওভেলাস ম্যালফরমেশন হয় বা আর্টারিওভেনাস ফিস্টুলা হয় তাহলে অ্যাম্বোলাইজেশন টেকনিকের মাধ্যমে এগুলো ঠিক করা যায়।
এ পদ্ধতিতে কাজ না হলে টিউমারের মতোই এটিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হয় এবং পরবর্তীতে এটি নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয়। এ ধরনের অপারেশন এখন নিউরোভাস্কুলার সার্জনরাই বেশি করছেন।
আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে টিউমার সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা। এটি করা না গেলে রিকারেন্স ঠেকানো যাবে না। রিকারেন্স হলো টিউমার দ্বিতীয়বার বা পুনরায় হওয়া। একটি সোয়ানোমা বা নিউরোফাইব্রোমা নার্ভশিথ থেকে ওঠে এবং সেটা যদি ডরসাল রুট থেকে ওঠে তাহলে সেই ডরসাল রুটটাকে স্যাক্রিফাইস করে পুরো নিউরোফাইব্রোমা বা সোয়ানোমাটাকে বের করে ফেলা হয়, এতে খুব বেশি সমস্যা করবে না।
ম্যানিনজিওমার ক্ষেত্রে ম্যানিনজিওমার যেখানে অ্যাচমেন্ট আছে বা অরিজিন থেকে টিউমারটা বের করে ওই অ্যাটাচমেন্টটা যেখানে ছিল, সেখানে ভালো করে কোয়াগোলিশন না করা হয় বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই জায়গা ফেলে দিয়ে ওখানে ড্যুরো-প্লাস্টিও করতে হয়। যদি না করা হয় তাহলে ওই জায়গা বা অরিজিন থেকে আবার সময়ের সাথে সাথে টিউমার হতে পারে।
ইন্ট্রা-ম্যাডুলারির ক্ষেত্রে যদি টিউমারটা কমপ্লিটলি বের করা না যায় তাহলে সেখান থেকে আবার রিকার করতে পারে। সেজন্য, রিকারেন্স রেটটা বেশি হয় স্পাইনাল মেনিনজিওমাতে, যেটি ইন্ট্রা-ড্যুরাল এক্সট্রা-ম্যাডুলারি এবং অ্যাপেন্ডাইমোমা ও অ্যাস্ট্রোসাইটোমাতে।
লেখক: ডা. সৌমিত্র সরকার
বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক
নিউরো সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল