মেরুদণ্ডের টিউমার অপসারণ কখন করবেন

ডা. সৌমিত্র সরকার
2021-12-17 12:48:55
মেরুদণ্ডের টিউমার অপসারণ কখন করবেন

বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে চিকিৎসা সহজে ও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়

বর্তমানে সাধারণ মানুষও বিশ্বের কোথায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে কি প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে এবং সেগুলো কিভাবে কাজ করে, তা ঘরে বসেই জানতে পারছে। আগে রোগীরা অস্ত্রোপচারের কথা শুনলে খুব বেশি প্রশ্ন করতেন না। এখন অনেক প্রশ্ন করেন। ছোট নাকি বড়, কেটে, অ্যান্ডোস্কোপ নাকি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অস্ত্রোপচার করবেন ইত্যাদি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোগীরা তাদের পছন্দগুলো সম্পর্কে জানতে পারছেন।

আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে আমাদের দেশের চিকিৎসা পদ্ধতির যেমন সমন্বয় হচ্ছে, তেমনি রোগীর সাথে চিকিৎসকের বোঝাপোড়া বাড়ছে। আমাদের আধুনিক হাসপাতালগুলোতে এখন আধুনিক বিশ্বের মোটামুটি সব ধরনের প্রযুক্তিই রয়েছে।

মেরুদণ্ডের টিউমারের অস্ত্রোপচারে সব ধরনের প্রযুক্তি বা মেশিনের প্রয়োজন নেই। ক্যুজা মেশিনের মাধ্যমে হাইস্পিড আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে টিউমার ভাঙা হয়। তবে এটি ছাড়া যে অস্ত্রোপচার করা যাবে না এমন নয়, তবে মেশিনটি থাকলে ভালো। ইন্ট্রা-ম্যাডুলারি টিউমার অপসারণে এই প্রযুক্তি থাকলে খুবই ভালো।

আবার আমরা যে নার্ভ মনিটরিং বা ইভো-পটেনশিয়াল মনিটরিং- যেটা দিয়ে দেখে দেখে অস্ত্রোপচার করা হয়, তা থাকলে ভালো কিন্তু অপরিহার্য কিছু না। সুতরাং বাইরের চেয়ে আমরা পিছিয়ে আছি, সেটি বললে ভুল হবে। কারণ প্রযুক্তি বা আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি আমাদের দেশে এসেছে। কিন্তু বড় বিষয় আস্থা।

অনেকের আমাদের দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কিছু সাধারণ অভিযোগ এমন, বাইরের চিকিৎসকরা রোগীকে অনেক সময় দেন, আমরা খুব বেশি সময় দেই না। আসলে চিকিৎসার পরবর্তী ফলো-আপ কেমন হবে, তা মানুষের সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার। অনেকেরই ধারণা, বাইরের দেশে গেলে ভালো চিকিৎসা পাবেন। আবার অনেকে বাইরের দেশে চিকিৎসা নিয়ে পরে আমাদের কাছে এসে বলেন, তারা ভুল করেছেন। কারণ অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে যাওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, এজন্য আপনারা না আসলেও পারতেন।

আমাদের দেশে দেখা যায়, রোগীর আত্মীয়-স্বজন অনেক পরামর্শ করে অনেক চিকিৎসক দেখান। কিন্তু তারা কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যান না। এক পর্যায়ে বাইরের দেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসা পদ্ধতি খারাপ। আসলে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে চিকিৎসা সহজে ও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এরপরও আমি বলব, আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো প্রযুক্তি আছে এবং অনেক হাসপাতালেই খুব ভালো অস্ত্রোপচার হচ্ছে।

মেরুদণ্ডের টিউমার ধীরে ধীরে বড় হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে দুর্বলতা আসে না। প্রথমে নাম্বনেস তারপরে উইকনেস আসে। রোগীর পা দুর্বল হয়ে যায়, হাঁটতে পারে না তখনই তারা চিকিৎসকের কাছে আসেন। দেখা যায়, স্পাইনাল কর্ড অলরেডি কমপ্রেশন হয়ে গেছে। কমপ্রেশন থাকলেও, হাঁটতে না পারলেও, মাসল গ্রেড জিরো বা পায়ে কোনো মুভমেন্ট নাই— এ অবস্থাতেও অস্ত্রোপচার করা গেলে রোগী আবার হাঁটতে পারেন।

তবে দীর্ঘদিন টিউমার থাকলে অনেক সময় ভাস্কুলার কমপ্রেশন হয়ে যায়। যে ব্লাড ভেসেলগুলা নার্ভরুটে ব্লাড সাপ্লাই করছে, সেগুলো দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে পার্মানেন্ট কমপ্রেশন হয়ে যায়। এই ভাস্কুলারিটি কমে গেলে এখানে অস্ত্রোপচার করলেও আশানুরূপ উন্নতি দেখা যায় না। তবে সাধারণত মেরুদণ্ডের টিউমারের অস্ত্রোপচারে রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়ে থাকে।

লেখক: ডা. সৌমিত্র সরকার
বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক
নিউরো সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


আরও দেখুন: