মেরুদণ্ডের টিউমার সার্জারির পর করণীয়
ঝুঁকে কাজ করা যাবে না, ঝাঁকুনিযুক্ত ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে
যেকোনো অস্ত্রোপচারের পর জটিলতা চিকিৎসারই অংশ। তবে একজন সার্জন সব সময় চেষ্টা করেন জটিলতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে। নার্ভরুট টিউমার যেগুলো আছে যেমন, সোয়ানোমা ও মেনিনজিওমা— এগুলো নার্ভরুট বা স্পাইনাল কর্ডে কোনো ড্যামেজ ছাড়াই পরিপূর্ণভাবে বের করে দেওয়া যায়।
একইভাবে এক্সট্রা-ড্যুরাল টিউমারগুলোও বের করে দেওয়া যায়। কিন্তু ম্যালিগনেন্সি থাকলে পরবর্তী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ইন্ট্রা-ম্যাডুলারি অ্যাপেন্ডাইমোমা এবং অ্যাস্ট্রোসাইটমারের ক্ষেত্রে ম্যাটিকুলাসলি সার্জারির পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা হয়, যা সময়ের সাথে ধীরে ধীরে রিকভার করে। তবে সমস্যা বেশি হলে এগুলো আবারো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং তখন ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
যেকোনো টিউমার অপসারণের পর হিস্টোপ্যাথলজি করা হয় এবং টিউমারের অবস্থা ও গ্রেডের ওপর পরবর্তী চিকিৎসা নির্ভর করে। বেনাইন টিউমার হলে সাধারণত আমরা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দিতে চাই না। কিন্তু অ্যাপেন্ডাইমোমা বা অ্যাস্ট্রোসাইটোমা হয় এবং গ্রেডটা বেশি হলে টিউমারের অবশিষ্ট অংশের জন্য রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দিতে হয়। এটির সাথে সাথে রোগীর সাইড টু সাইড ফিজিওথেরাপি, লাইফস্টাইল মোডিফিকেশন ও রিহ্যাবিলিটেশনেও কাজ করতে হয়।
রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি রয়েছে। এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যদি অনেক সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া হয়, যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম দেখা যায়। রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি সাধারণত দেওয়া হয় ম্যালিগনেন্ট টিউমারের ক্ষেত্রে। ইন্ট্রা-ম্যাডুলারি টিউমার অ্যাপেন্ডাইমোমা, অ্যাস্ট্রোসাইটোমা— এগুলো গ্রেড ওয়ান এমনকি গ্রেড টু পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অপসারণ করা গেলে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দেওয়া হয় না। কিন্তু এটি গ্রেড থ্রি বা ফোর হলে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দিতে হবে। তবে এখানে বুঝতে হবে, কেমোথেরাপি দিয়ে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা যায় না। শুধুমাত্র তার আয়ুটা বাড়ানো যায়।
মেরুদণ্ডের টিউমারের সমস্যাগুলো কিন্তু শারীরিক সক্রিয়তার সাথে সম্পৃক্ত না। তবে লং সেগমেন্ট অপারেশন করা লাগে বা ল্যামিনোপ্লাস্টি করতে হয়, তখন রোগীকে প্রাথমিকভাবে কিছু ফিজিওথেরাপি দিয়ে পরে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে বলা হয়। যারা ভারী কাজ করেন, সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। খুব বেশি পরিশ্রম বা মাটিতে বসে কাজ করলে তাদের লাইফস্টাইলে মডিফাই করতেই হবে।
ঝুঁকে কাজ করা যাবে না, ঝাঁকুনিযুক্ত ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে। আবার একেবারে শুয়ে-বসে সময় কাটাতেও নিষেধ করি আমরা। ওজন কমাতে হবে। মেরুদণ্ডকে আবার আগের মতো ফর্মে নিয়ে যেতে কিছু এক্সারসাইজ শিখিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো করতে হয়। কারণ রোগী নিজের ইচ্ছেমতো পুশ-আপ বা ওয়েট লিফটিং করলে আবারো সমস্যা ফিরে আসতে পারে।
লেখক: ডা. সৌমিত্র সরকার
বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক
নিউরো সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল