শীতে বাড়ে টনসিলের সমস্যা, করণীয়

ডা. ইসমাইল আজহারি
2021-11-04 16:10:55
শীতে বাড়ে টনসিলের সমস্যা, করণীয়

বছরে সাতবারের বেশি সংক্রমণ অথবা পরপর তিন বছর তিনবারের বেশি সংক্রমণ হলে অস্ত্রোপচার লাগে

টনসিল হলো মুখ গহব্বরের অভ্যন্তরে গলার একদম উপরিভাগের কিছু মাংসপিণ্ড। লিম্ফ টিস্যু দিয়ে গঠিত মাংসপিণ্ডটি চারটি গ্রুপে অবস্থান করে। জিহবার পেছনের দিকে লিংগুয়াল টনসিল, গলার দুই পাশে প্যালাটাইন টনসিল, নাসারন্ধ্রের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংক্সের মধ্যে অ্যাডেনয়েড বা ন্যাসোফ্যারেঞ্জিয়াল টনসিল ও টিউবাল টনসিল।

টনসিলের গ্রন্থিগুলো অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে ও শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। টনসিলাইটিস বা টনসিলের রোগ বলতে প্যালাটাইন টনসিল বা যে দুটি টনসিল গলার উপরিভাগে দুই পাশে বিস্তৃত, তার মধ্যে কোনো প্রদাহকে বোঝায়। টনসিল সব বয়সেই হয় থাকে। তবে ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের হওয়ার প্রবণতা বেশি।

টনসিলের রোগ কেন হয়
> সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টনসিলে সমস্যা হয়। যেমন কেউ রেস্পাইরেটরি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার টনসিলে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

> অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় পান করলে মুখ গহব্বরের অভ্যন্তরীণে উপকারী অণুজীবগুলো টনসিলের মধ্যে কোলোনাইজেশন হয়ে সংক্রমণ হতে পারে।

> ইমিউনিটি দুর্বল থাকলে জ্বর কিংবা সর্দি-কাশির পর বা যেকোনো রেস্পাইরেটরি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেকেন্ডারি সংক্রমণ হিসেবে টনসিলে সমস্যা হতে পারে।

> শীতকালে মৌসুমি ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ ভাইরাল সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে গেলেও টনসিলের সমস্যা বেড়ে যায়।

টনসিল রোগের উপসর্গ
> মুখ গহব্বরের পেছনে গলার উপরিভাগের দুই পাশে লাল হয়ে ফুলে যাবে

> টনসিলের আশেপাশে সাদা কিংবা হলুদ র‍্যাশ দেখা দেওয়া

> মাথা ও গলাব্যথা

> সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে

> খাবার খেতে গেলে গলায় ব্যথা লাগা

> কাধের আশেপাশে লিম্প নোডগুলো ফুলে যেতে পারে

> স্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে

> নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হওয়া

> বারবার টনসিলে সংক্রমণ হলে খাবারের রুচি কমে যায়

> রাতে নাক ডাকে

> শিশুদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, খাবারে অনীহা, কান্নাকাটি করে

প্রতিকারে করণীয়
> ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা অপরিহার্য

> ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া

> ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া

> এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে তা দিয়ে গার্গল করে কুলি করা দিনে ৭ থেকে ১০ বার

> নিয়মিত মধু ও কালো জিরার তেল খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়

> ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ এবং সংক্রমণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।

> মুখের ভেতরে সংক্রমণ যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য ওরাল হাইজিন মেনে চলতে হবে। পভিডন মাউথওয়াস ২-৩ চামচ এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পরপর গার্গল করে কুলি করা যেতে পারে

কখন টনসিলের অস্ত্রোপচার লাগবে
> যদি বছরে সাতবারের বেশি সংক্রমণ অথবা পরপর তিন বছর তিনবারের বেশি সংক্রমণ হয়

> টনসিলের আশেপাশে অ্যাবসেস বা পুঁজ হয়ে গেলে

> মুখের ওষুধে সুস্থ না হলে

> লাগাতার গলাব্যথা থাকলে

> সব সময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে

> পরিপূর্ণ অজ্ঞান করে টনসিল কেটে ফেলা হয়। ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। অস্ত্রোপচারের পরও ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা অপরিহার্য।

লেখক: ডা. ইসমাইল আজহারি
পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ
চেম্বার: ফরাজী হাসপাতাল, নতুনবাজার ব্রাঞ্চ, বারিধারা, ঢাকা।
ই-মেইল: ismailazhari49@gmail.com


আরও দেখুন: