মেরুদণ্ডের কোন অংশে টিউমার বেশি হয়, করণীয়
মেরুদণ্ডের টিউমারের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্তের হার অনেক কম
মানুষের মেরুদণ্ড অনেকগুলো সেগমেন্ট বা অংশে বিভক্ত। মেরুদণ্ডের অংশ ভেদে টিউমার বেশি বা কম হবে এমন কোনো অনুপাত নেই। ইন্ট্রা-ম্যাডুলারির ক্ষেত্রে ইনসাইড দা সেগমেন্টস চিন্তা করলে আলাদাভাবে টিউমারগুলো হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তবে ইন্ট্রা-ড্যুরাল এক্সট্রা-ম্যাডুলারি চিন্তা করলে নার্ভরুটসের টিউমার এন্টায়ারলি প্লেসড হয়ে মেরুদণ্ডকে একপাশে সরিয়ে দিতে পারে অথবা পেছন দিকের কোনো টিউমার চাপ দিয়ে সামনের দিকে ডিসপ্লেস করে দিতে পারে।
মেরুদণ্ডের টিউমার অনেক বেশি জায়গাজুড়ে হলে হাড়গুলো ডিকম্প্রেশন করে সার্জারি করা হয়। অনেক সময় মেরুদণ্ডে অ্যারাকনয়েড সিস্ট পাওয়া যায়। সিস্ট ও টিউমার আলাদা হলেও এটি স্পেস অক্যুপায়িং লেশনের মধ্যে পড়ে। এ সিস্ট অনেক লম্বা জায়গাজুড়ে থাকে। আবার অ্যাপেন্ডাইমোমা ও অ্যাস্ট্রোসাইটমাও অনেক দীর্ঘ অংশ নিয়ে থাকতে পারে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য আমাদের যখন ওখানে ঢুকতে হয় তখন একটি উইন্ডো বা জানালা তৈরি করে ঢুকতে হয়। যেমন করে একটি ঘরে ঢুকতে গেলে আমাদের অবশ্যই দরজা-জানালা খুলে ঢুকতে হবে। এক্ষেত্রেও ভার্টিব্রাল পোস্ট্রিওর অ্যাপ্রোচে গিয়ে ওখানে হাড় কেটে ঢুকতে হবে এবং লং সেগমেন্টের ক্ষেত্রে যদি এটি ল্যামিনিক্টোমি করে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তীতে এটি টাইফুসিস হয়ে রোগীর ভার্টিব্রাল কলামে দেখা যায় এলাইনমেন্টটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এক্ষেত্রে এখানে বিকল্প হিসেবে ল্যামিনোপ্লাস্টি করা হয়। এটি হচ্ছে, ভার্টিব্রাল কলামের পেছনের অংশ বা ল্যামিনা যেটা কেটে ফেলা হচ্ছে, সেটিকে আবার পরে ফিট করে দেওয়া। সেজন্য লং সেগমেন্টের ক্ষেত্রে ল্যামিনিক্টোমি না করে ল্যামিনোপ্লাস্টি করতে হয়। না হলে পরবর্তীতে রোগীর টাইফুসিস বা ক্রনিক ব্যাকপেইন দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় নরমাল একটি টিউমারের জন্য ভার্টিব্রাল বডিতে ওয়েজিং হয়ে যায়। তখন স্ট্যাবিলাইজ করার প্রয়োজন পড়ে। যখন লং সেগমেন্ট ধরে টিউমার থাকে এবং সেখানে ল্যামিনোপ্লাস্টি করার উপায় থাকে না, ল্যামিনিক্টোমিই করতে হয়, সেক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজেশন করাই ভালো। আর সেখানে যদি ল্যামিনোপ্লাস্টি করার সুযোগ থাকে, তাহলে স্ট্যাবিলাইজেশনের কোনো দরকার নেই। অবশ্য এই সমস্যাটা শর্ট সেগমেন্ট টিউমারের জন্য প্রযোজ্য না। শর্ট সেগমেন্ট টিউমারে ল্যামিনিক্টোমি করে ফেললেও কোনো সমস্যা থাকবে না।
মেরুদণ্ডের টিউমারের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্তের হার অনেক কম। শিশুরা আক্রান্ত হলে সাধারণত ইন্ট্রা-ম্যাডুলারি টিউমার অর্থাৎ অ্যাপেন্ডাইমোমা বা অ্যাস্ট্রোসাইটোমাতে আক্রান্ত হয়। মেরুদণ্ডের ভেতরের টিউমারগুলো আসলে একটু খারাপ ধরনেরই হয়। তবে সবচেয়ে আশার কথা, শিশুদের মধ্যে এটিতে আক্রান্তের হার অনেক কম।
লেখক: ডা. সৌমিত্র সরকার
বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক
নিউরো সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল