মায়ের থাইরয়েড সমস্যা থাকলে কি সন্তানেরও হয়?
একটা কথা মনে রাখবেন, যে মায়ের কোনো অসুখ নেই, তার বংশে কোনো অসুখ নেই, সেই বাচ্চারও এবনরমালিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমার মনে হয়, যারা অবিবাহিত, বিবাহিত কিংবা বাচ্চা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন, কিন্তু মায়ের থাইরয়েডের সমস্যা আছে এক্ষেত্রে বাচ্চার থাইরয়েডের সমস্যা হবে কিনা এ ব্যাপারে অনেকের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকেন। এক্ষেত্রে প্রথম কথা হচ্ছে একেবারেই ঘাবড়ে যাবেন না। থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, যেই রোগীর হোক না কেন থাইরয়েডের চিকিৎসা আল্লাহর রহমতে আমরা খুব সহজেই করতে পারি।
থাইরয়েডের চিকিৎসা, পরীক্ষা, ওষুধ, ডাক্তার- এ সব কিছুই বাংলাদেশে যথেষ্ঠ আছে। আলহামদু লিল্লাহ, হাইপার থাইরয়েডের রোগী যখন গর্ভাবস্থায় থাকে, সেই বিষয়ে যে ওষুধগুলো সারা পৃথিবীতে নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, সেই ওষুধগুলো আমাদের দেশের নিজস্ব ওষুধ কোম্পানিগুলো তৈরি করছে। তাই খুব সহজে এবং সুলভে এই ওষুধগুলো আমরা রোগীদের জন্য লিখতে পারি এবং রোগীরাও ওষুধগুলো সেবন করতে পারে।
এখন রোগীর হাইপার থাইরয়েড অথবা হাইপোথাইরয়েড যেটাই হোক উনি যদি মা হন, উনার যদি হরমোনের অসুখ থাকে এবং যে নিরাপদ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে উনার হরমোনের লেভেল ঠিক থাকবে, সে অবস্থায় উনি গর্ভধারণ চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ বাচ্চার কোনো ধরনের সাইড ইফেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন, যে মায়ের কোনো অসুখ নেই, তার বংশে কোনো অসুখ নেই, সেই বাচ্চারও এবনরমালিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা আল্লাহ তা’য়ালার নিয়ম। যেকোনো প্রেগন্যান্সিতে একটা সার্টেন কম্প্লিকেশনের পার্সেন্টেজ থাকে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- চিকিৎসা করে সেটাকে সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসা।
আর থাইরয়েড হরমোনের কতগুলো রোগ আছে, যেখানে শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, এই রোগগুলো বংশে ট্রানস্ফার হয়, ডায়াবেটিসের মত। সেই বংশের সেই মায়ের ছেলেমেয়েরা সঙ্গে সঙ্গেই যে গর্ভ থেকেই থাইরয়েডের অসুখ নিয়ে জন্মায় ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি থাইরয়েড হরমোনের গণ্ডগোলজনিত কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে দেখা দেয়, এক্ষেত্রে প্রথমবারে নবজাতকের থাইরয়েড হরমোন চেক করে নিতে হবে। যদি কোনো রকম লক্ষণ ধরা না পড়ে সে ক্ষেত্রে তাকে থাইরয়েড হরমোনের লক্ষণগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন কোনো বাচ্চা হঠাৎ মোটা হয়ে যাচ্ছে অথবা কোনো বাচ্চা হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে, ঠিকমতো বড় হচ্ছে না।
তখন মায়ের যদি থাইরয়েডের ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই শিশুর থাইরয়েড হরমোন চেক করাতে হবে। যদি কোনো অসুখ ধরা পড়ে, তাহলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কারণ একটা বাচ্চার সঠিক সময় থাইরয়েডের চিকিৎসার সঙ্গে তার গ্ৰোথ, তার ডেভেলপমেন্ট মানে হচ্ছে সঠিক সময়ে বংশগতভাবে তার যতটুকু লম্বা হওয়ার কথা বয়স অনুযায়ী সেটা তার হচ্ছে কিনা, বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে কিনা, কারণ তিন বছরের বুদ্ধিমত্তা ছয় বছরের বুদ্ধিমত্তা একই হবে না। সুতরাং কারো যদি মনে হয়, যে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা কম হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই থাইরয়েড হরমোনের দিকে নজর রাখতে হবে।
বাচ্চার বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো ঠিকমত হচ্ছে কিনা, এগুলো আমাদের নজরে রাখতে হবে যাতে করে এই শিশুগুলোকে আমরা অন্য নরমাল শিশুগুলোর মতো করে নরমাল জীবন উপহার দিতে পারি। ভবিষ্যতে এ বাচ্চাগুলো বাবা-মা হবে, তখনো এই বাচ্চাগুলোর হরমোন বিশেষজ্ঞের সাপোর্ট লাগবে।