রমজানে বদহজম ও বায়ু সমস্যা দূর করার উপায়

অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ
2021-04-18 14:01:02
রমজানে বদহজম ও বায়ু সমস্যা দূর করার উপায়

রমজানে অনেকের বদহজম হয়। বায়ু সমস্যায় ভোগেন কেউ কেউ। এজন্য অতিরিক্ত ভুরিভোজ, তৈলাক্ত ও  চর্বিজাতীয় খাবার দায়ী। এ  সমস্যা দূরীকরণে করনীয় সম্পর্কে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভুরিভোজ করা ,তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে টয়লেটের গন্ডগোল হচ্ছে, বদ হজম হচ্ছে, গ্যাস বেশি হওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য এগুলো রোজার সময় হয়ে থাকে। আরেকটি প্রবণতা হচ্ছে রমজানে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া, দই খাওয়া। এই খাবারগুলো ৭০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্কদের পেটে হজমের সমস্যা করে। হজম সমস্যা থাকলে গ্যাস বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পেট ফুলে থাকে, পায়খানাতে গন্ডগোল হয়, পেটে গ্যাস হয়, পেটে ব্যথা হয়, তাদেরকে দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। ইসলাম ধর্মেও নির্দেশনা দেয়া আছে, রোজার সময় স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার খেতে হবে।

রোজার সময় অনেকের খাবার উপরের দিকে উঠে আসে, প্রচুর ঢেকুর হয়। এ সমস্যার সমাধানে অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদের পরামর্শ, দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। তারপরেও সমস্যা হলে, আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো কোম্পানির গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ রয়েছে, সেগুলো সেবন করুন। যেমন এক্সিয়াম মাপস, ডমপেরিডন। এর ওষুধগুলো খুব ভালো উপকারে আসে।

রমজানে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ পানি কম  পান করলে এবং আঁশ জাতীয় খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। আঁশ জাতীয় খাবার বলতে ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ। এছাড়া ডায়াবেটিস, হরমোন পরিবর্তন, তলপেটের বা পায়খানার রাস্তার আশপাশের যেসব মাসলগুলো আছে, সেগুলো কোনো কারণে দুর্বল হয়ে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কারো স্পাইনাল কড বা নার্ভের কোন সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম কম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। তাই রমজানে বেশি পান করা ও আঁশজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, রমজানে অনেকের মাথাব্যথা হয়। কিন্তু এটির সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের কোন সম্পর্ক নেই। এটা অন্য কোন রোগের কারণে হতে পারে। বেশি ক্ষুধা লাগার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। রোজার সময় দিনের শেষ সময়টাতে ক্ষুধার কারণে মাথাব্যাথা হতে পারে। তখন ইফতারের পর সমস্যাটা কমে যাবে। আর না কমলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

রমজানে আরেকটি সমস্যা ঢেকুর ওঠা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত খাদ্যাভ্যাসের গন্ডগোলের কারণে এটা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি পেপটিক আলসার, লিভারের রোগ, গল ব্লাডারের রোগ, প্যানক্রিয়াসের রোগের কোরণে ঢেকুর হতে পারে। অনেক সময় মানসিক অশান্তির কারণেও এ সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। প্রথমে এ ধরণের সমস্যা নির্ণয় করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। পাশাপাশি পরামর্শ হলো,  আপনি সুষম খাবার খান। আপনার উচিত হবে একটু হাঁটাচলা করা ,শারীরিক ব্যায়াম করা। এর ফলে গ্যাসের সমস্যা কম থাকবে।

তারপরেও যদি রোজার মধ্যে যদি ঢেকুর তোলা বন্ধ না হয় তবে এক্সিয়াম মাপস জাতীয় ওষুধগুলো প্রতিদিন একটি করে খেলে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা হবে না।

ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফল খেতে হবে। শসা, খেজুর খেতে হবে। ছোলা, হালিম খেতে পারি। কেউ চিড়া খেতে চায়, ভাত খেতে চায়,তাহলে সেটা খাওয়া উচিত। কিন্তু ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, যেমন চপ, বেগুনি আমরা সারা বছর সহজে খাই না। কিন্তু রোজার সময় বেশি খাই। এসব খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যথাসম্ভব এসব খাবার পরিহার করা উচিত।


আরও দেখুন: