২০-৩৫ বছর বয়সী নারীদের পিসিওএস রোগের আশংকা বেশি
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু ফাইল ছবি
পিসিওএস (পলি সিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) নারীদের হরমোনজনিত একটি রোগ। গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে প্রায় ৪০ ভাগ নারী এই রোগে কমবেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ অনিয়মিত মাসিক, মুখে বা শরীরে অত্যাধিক লোম বৃদ্ধি, মাথার চুল পড়া, তৈলাক্ত ত্বক ও ওজন বৃদ্ধি। রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ ও কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন পলি সিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ক্লাবের সভাপতি ও দেশের প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন আক্তার।
ডক্টর টিভি: ম্যাডাম, কেমন আছেন?
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
ডক্টর টিভি: প্রথমেই পিসিওএস রোগটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: পিসিওএস (PCOS) নারীদের হরমোনজনিত একটি রোগ। ১৭২১ সালে ইতালিতে প্রথম এই রোগের দুই থেকে তিনটা উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীতে চিকিৎসা গবেষক স্টেন এবং লিভেনগাল এটা নিয়ে গবেষণা করেন। শুরুর দিকে রোগটি তাদের নামে ‘স্টিন লিভেনগাল সিনড্রম নামে পরিচিত ছিল।
ডক্টর টিভি: রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে বলুন।
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: পিসিওএস রোগে তিন থেকে চার রকমের প্রাথমিক উপসর্গ থাকে। বর্তমানে এর ভয়াবহতা ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে। শুরুর দিকে অনিয়মিত মাসিক নজরে আসে। মাসিক শুরু হবার পর দেখা যায়, চার মাস, পাঁচ মাস, ছয় মাস এমনকি এক বছরও এটি বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া দু’টি মাসিকের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ দিনের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৬০ বা তারও বেশি দিনে। এ রোগে আক্রান্তদের ওজন বৃদ্ধি বা অতিরিক্ত মোটা, শরীরে অবাঞ্ছনীয় লোম (ঠোঁটের উপরে, দাড়িতে, বুকের মাঝখানে, পিঠের উপরের অংশে, হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত) দেখা যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ব্রণ ও চামড়ায় কালচে ছোপও পড়তে পারে। চুলগুলো অসম্ভব মোটা হওয়া, কালচে হয়ে যাওয়া এমনকি অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়াও এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। পিসিওএস এর প্রধান সমস্যা "সিস্ট" নয়, বরং হরমোন সমস্যার কারণে "সিস্ট" তৈরি হয়। আবার পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় থাকা মানেই সবসময় পিসিওএস নয়।
ডক্টর টিভি: কি কি কারণে পিসিওএস রোগের ঝুঁকি বাড়ে?
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: জিনগত কারণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইনসুলিন বিরোধিতা, শরীরে উচ্চমাত্রার প্রদাহ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ফাস্টফুড জাতীয় ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এই রোগকে বেশি প্রভাবিত করে। তবে জরায়ুতে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু যেটি হয় আক্রান্ত মেয়েরা মানসিকভাবে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
ডক্টর টিভি: পিসিওএস রোগটি কি বংশগত?
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: এটি পুরোপুরি বংশগত রোগ না হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়ের যদি হয় তাহলে তার মেয়ে বা বোনদেরও এটি হচ্ছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, এটি অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক রোগও হতে পারে।
ডক্টর টিভি: কোন বয়সী নারীরা এই রোগের ঝুঁকি বেশি?
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: কিশোরী থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত ২০-৩৫ বছর বয়সী নারীদের সবচেয়ে বেশি ডিম্বানু নির্গত হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে ৩৫ বছরের পরে ডিম্বানু উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রোগটির ঝুঁকিও কমে।
ডক্টর টিভি: আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: আপনাকে ও ডক্টর টিভির সকল দর্শক-শ্রোতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।