দ্বিতীয়বার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ফিরে আসলে করণীয় কী?
আমরা অনেকটাই পরিচিত হয়ে গেছি ডায়াবেটিসের সাথে। কিন্তু প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক শংকা, অনেক অজানা তথ্য রয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্কয়ার হসপিটালের সিনিয়র কনসালটেন্ট স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস ফাতেমা
ডক্টর টিভি: কোনো কোনো নারীর দুটো সন্তান হওয়ার সময় ডায়াবেটিস ছিল। প্রথম সন্তানের সময় ডায়াবেটিস চলে গিয়েছিল; কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানের সময় আবার শুরু হয়েছে। এখন তাদের করণীয় কী?
ডা. নার্গিস ফাতেমা: যাদের সুগার লেভেলটা একটু বেশি থাকে তাদের এটা অনেকেরই কন্টিনিউ করে। সাধারণত দেখা যায়, ৯০-৯৫ ভাগের ক্ষেত্রে ডেলিভারির পরে কমে যায়। অর্থাৎ এটা আবার উনার ডায়াবেটিসের জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর।
যার প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস ছিল তার আবার ভবিষ্যতে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার অর্থাৎ সাধারণভাবে যে ডায়াবেটিসটা আমাদের সমাজে প্রচলিত সেই টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার রিস্ক তাদের অবশ্যই বাড়ে। এজন্য প্রত্যেক মাকে যখন তার আগের প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস ছিল তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত যাতে করে পরের প্রেগনেন্সিতে এ রোগ তাদেরকে আক্রমণ করতে না পারে,তার মধ্যে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ, ডায়েট, ওজন নিয়ন্ত্রণ এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন উনার যেহেতু হয়েই গিয়েছে।
দুটো বাচ্চা হওয়ার পরে এখন তাহলে ওনাকে অন্য পেশেন্টদের মত নিজের ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য উনি একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকবেন। আর তিনটা জিনিস ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে পারে। সেগুলো হলো- থ্রিডি ডায়েট,ডিসিপ্লিন এবং ওষুধ। প্রথমত ওই রোগীদের ডায়েট এবং ডিসিপ্লিন দিয়ে অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এটা কোন মন খারাপ করার কিছু না যে আমি খেতে পারব না; অনেক কিছুই খাওয়া যাবে, তবে অল্প কিছু জিনিস খাওয়া যাবে না।
সুগার জাতীয় জাতীয় জিনিস খাওয়া যাবে না হাই ক্যালরি জাতীয় ডেজার্ট আইটেম খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসের যে চার্ট দেয়া থাকে সেখানে অনেক বিকল্প পদ্ধতি থাকে। ঘুরে ফিরে খেলে সেটা তেমন বড় কোনো সমস্যা না। সবচেয়ে বড় কথা এটা বুঝতে হবে যে এটা আমি আমার নিজের প্রয়োজনে খাব।
রোগীকে সব সময় গুরুত্বসহকারে মনে রাখতে হবে যে, আমি যদি আজ ডায়াবেটিস কন্ট্রোল না করি তাহলে ভবিষ্যতে আমার চোখ নষ্ট হবে, আমার কিডনি নষ্ট হবে। আমার হৃদপিণ্ডে ব্লক দেখা দিবে। আমি হয়তো একটা পঙ্গু জীবনযাপন করতে বাধ্য হব। আমার কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে আমাকে ডায়ালিসিস করতে হবে। তাই আমি যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবো সেটা আমি আমার একান্তই নিজের জন্য করব।
ডিসিপ্লিনের মধ্যে হচ্ছে সময়মতো খাওয়া, সময়মতো বিশ্রাম নেয়া এবং কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা। হাঁটা একটা অন্যতম ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ, এটা মেইনটেইন করতে হবে। যদি ওজন বেশি থাকে তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ দুটো জিনিস করলে কমে আসবে। এবং উনার টার্গেট ব্লাড সুগার লেভেল ফাস্ট ৬ এর নিচে এবং খাওয়ার পরে ৮ এর নিচে থাকলে অনেক দীর্ঘ দিন ভালো থাকবেন। কাজেই সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডায়েট এবং এক্সারসাইজ দিয়ে যদি না হয় তবে অবশ্যই ওনার চিকিৎসক ওনাকে কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন।
সাধারণত মুখে খাওয়ার ওষুধ দেয়া হয় যেহেতু উনি প্রেগন্যান্ট না। ঔষুধ খাওয়া সত্ত্বেও উনার কন্ট্রোল না হয় তবে ইনসুলিন হচ্ছে সবচেয়ে ভালো চয়েজ।
ইনসুলিনের অভাবে আমাদের ডায়াবেটিসটা হচ্ছে। নরমালি ডায়াবেটিস যার নেই তার প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন তৈরি করে যে ইনসুলিনটা প্রয়োজন মতো যথেষ্ট। কিন্তু যার ডায়াবেটিস হয়েছে তার সুগার বেশি খাওয়ার জন্য না হলেও নরমাল সুগার খাওয়ার জন্য হলেও তার প্যানক্রিয়াস যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা তার কোষে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা অথবা সেনসিটিভিটি কমে গেছে, কাজের তার ইনসুলিনের পরিমাণটা বেশি লাগবে। সেরকম যদি হয় তাহলে অবশ্যই তাকে ইনসুলিন নিতে হবে। হয়তো এমন হতে পারে কিছুদিন উনি ইনসুলিন নিয়ে, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করে নিজেকে সুস্থ করে আবার ইনসুলিন এর ডোজ কমিয়ে দিতে পারেন। কাজেই ওনাকে এখন একজন সাধারণ ডায়াবেটিস রোগীর মত করে চিকিৎসায় দেয়া হবে।
তবে যদি ওনি ভবিষ্যতে আবার মা চান বা গর্ভবতী হতে চান তাহলে ওই যে কথাগুলো বলা হয়েছে তাকে অবশ্যই সুগার কন্ট্রোল রাখতে হবে কমপক্ষে ৩ মাস। কমপক্ষে ৩ মাস সুগার কন্ট্রোল রাখা অবস্থায় হিমোগ্লোবিন ১৬৬ নিচে আসার পর উনি পরবর্তী প্রেগনেন্সির প্ল্যান করতে হবে।তাহলে তার ওই প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিকস থাকা সত্ত্বেও তার সন্তানের ওপর কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে না।
যদি তার চোখ খারাপ হয়ে থাকে কিডনি খারাপ হয়ে থাকে বা খারাপ হওয়ার লক্ষণ থাকে এবং দুটো বাচ্চা থাকার পরেও তার নতুন করে কোন বাচ্চা নেয়াটা ঠিক হবে না, এতে করে তার নিজের ক্ষতি হতে পারে।অনেকে আছে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন যাদের বাচ্চা নেই তারাও ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করে বাচ্চা নিতে পারবেন।