পেঁপের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
পেঁপের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যকর উপকারিতা (ইনসেটে ডায়েটিশিয়ান নাঈমা রুবী)
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কম মূল্যের যে সবজিটি পাওয়া যায় সেটি হল পেঁপে। পেঁপে তে একই সাথে সবজি এবং ফল।যখন কাঁচা থাকে তখন এটি আমরা সবজি হিসেবে গ্রহণ করে থাকি এবং পাকলে সেটি আমরা ফল হিসাবে খাই। পেঁপে দিয়ে ভর্তা, তরকারি, ভাজি বা মিশ্র সবজি তৈরি করা যায়। ফল হিসাবে টুকরো করে খাওয়া যায়, এছাড়া জুস করে বা অন্যান্য আইটেমের মধ্যে যেরকম কাস্টার্ড, ফ্রুট সালাদ এগুলোতে ব্যবহার করা যায়। এটি এমন একটা সবজি যেটাতে খুব কম মানুষের এলার্জি থাকে,উপরন্তু এটি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে।
১০০ গ্রাম পেঁপেতে থাকা পুষ্টি উপাদান:
* এনার্জি: ৩৩কিলোক্যালরী
* শর্করা: ৬.৫ গ্রাম
* প্রোটিন:০.৬ গ্রাম
* ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
* আঁশ: ১.৭গ্রাম
* ভিটামিন সি: ৬১ মি.গ্রা.
* থায়ামিন: ০.০৮ মি.গ্রা.
* রিবোফ্লাভিন : ০.০৩ মি.গ্রা.
* ক্যালসিয়াম : ২৯ মি.গ্রা.
* আয়রন: ০.৩ মি.গ্রা.
* পটাসিয়াম : ১৮২ মি.গ্রা.
* ম্যাগনেসিয়াম: ১০ মি.গ্রা.
* ফসফরাস: ১১ মি.গ্রা.
* সোডিয়াম: ৪ মি.গ্রা.
* জিংক: ০.১৭ মি.গ্রা.
* কপার: ০.২৪ মি.গ্রা.
* পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা-ক্যারোটিন, ফ্লেভোনয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন আছে- যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
* এতে প্রাকৃতিক আঁশ, ভিটামিন এ, সি এবং কে,পটাশিয়াম আছে।
* পেঁপেতে পেপেইন নামের উপাদান আমাদের শরীরের আমিষকে ভেঙে হজম করে সহজেই এবং পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে।
পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতা:
পেঁপে কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় দুই অবস্থাতেই আমরা নানা ধরনের উপকারিতা পাই।
১. চোখের যত্নে পেঁপে খুবই ভালো কারণ পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে যে অন্ধ হয়ে যায় সেটি ৩৭% শতাংশ পর্যন্ত কমায়।
২. পেঁপে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা দেহে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে বাধা দেয়।
৩. চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আদর্শ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখতে পারেন।
৪. পেঁপে আমাদের দেহের রক্ত সরবরাহে কাজ করে। তাই হৃদপিন্ডের যে নানা রোগ আছে সেগুলো কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পেঁপে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
৫. পেঁপে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,সি এবং ই আছে।
৬. পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে। এছাড়া প্রচুর পানি এবং দ্রবণীয় আঁশ আছে। যারা হজম সমস্যায় যারা ভোগে তাদের জন্য পেঁপে খুব উপকারী।
৭. কোলেস্টেরল কমায় পেঁপে,এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই কোলেস্টেরল যাদের অনেক বেশি তারা পেঁপে গ্রহণ করতে পারেন।
৮. ত্বকের জন্য পেঁপে অনেক উপকারী। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ও একজিমা রোধ করতে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পেঁপে খুবই উপকারী। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বক, চুল এবং মাড়ির জন্য খুব উপকারী।
৯. পেঁপেতে খুব ভালো পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার রয়েছে। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা করে হাড় মজবুত করে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস দূর করতে সাহায্য করে পেঁপে।
১০. শ্বাস-প্রশ্বাসের আরোগ্যের জন্য পেঁপে ভূমিকা অনেক।
১১. অন্ত্রের অর্শ এবং কৃমি রোধ করে।
১২. টক দই সাথে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল ঝলমলে হয়।
* সতর্কতা:
১. পেঁপেতে পেপেইন নামন এনিজাইম থাকায় অতিরিক্ত পেঁপে খেলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
২. পেঁপে বেশি খেলে বদহজম বা পাতলা পায়খানা হওয়ার প্রবণতা থাকে
৩. কাঁচা পেঁপের রস বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। কাঁচা পেঁপে নির্যাস শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি পান করলে বিষ ক্রিয়া ও এবডোমিনালে ব্যথা হতে পারে।
৪. এর কালো বিচিগুলো শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এগুলোতে টক্সিক এনজাইম কারপাইন থাকে, যা মস্তিষ্কের অসারতা তৈরি করে কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন বা প্যারালাইসিস তৈরি করতে পারে।
লেখকঃ
নাঈমা রুবী,
ডায়েটিশিয়ান, নিউরোজেন হেলথকেয়ার লিমিটেড ও বিটিআরএফ।
\