নিউরোলজি বিভাগের কাছে দিন দিন ঋণ বাড়ছে

ডা. মো. তরিকুল হাসান
2024-05-10 10:10:30
নিউরোলজি বিভাগের কাছে দিন দিন ঋণ বাড়ছে

মমেকের নিউরোলজি বিভাগ থেকে দেয়া সম্মাননা (ইনসেটে ডা. মো. তরিকুল হাসান)

২০১৭ সাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সাথে পথচলা। কোর্সমেট নাজমুস সাদাতের সাথে কলেজে দেখা হলো। কলেজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সাইন নেয়ার জন্য ডিপার্টমেন্টে এলাম। স্যাররা বললেন কাল থেকেই জয়েন করো। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো! বাসা-টাসা কিছুই ঠিক করিনি।

ব্রাহ্মপল্লীতে ছাত্রদের একটা মেসে উঠলাম। রাউন্ডে এসে দেখলাম, নিউরোলজির 'ক খ গ'ও পারি না। কয়েকদিন পর লং কেস প্রেজেন্ট করতে বলা হলো। সিআইডিপি রোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ নানাকে প্রেজেন্ট করলাম। এই রোগী আমাকে সত্যি সত্যি নাতি বানিয়ে ফেললেন। উনি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। উনার স্ত্রী, ছেলেরা এখনো আমার কাছে আসেন। এখনো সেই আন্তরিকতা রয়ে গেছে।

স্ট্রোক ইউনিটে আমাদের এক মাসের প্লেসমেন্ট থাকে। স্ট্রোক ইউনিট প্লেসমেন্ট শেষ করে যে রোগীটি দেখলাম তার বাড়ি হালুয়াঘাট। সে আমার খালাতো ভাই মাওলানা ইয়াসিনের মাদ্রাসার ছাত্রী। একদম অচেতন আর শরীর ফুলে গেছে। ফুলে যাওয়ার কারণ, স্বল্প মেয়াদি কিডনির মারাত্মক সংক্রমণ।

মেয়েটার নিউরোলজিক্যাল ফাইন্ডিংস খুবই এলোমেলো। কোন রোগের সাথে তেমন মিলে না। আমি কিডনিতে সমস্যা হয় এমন সব ওষুধ বন্ধ করে তার ইনপুট আউটপুট ম্যাচ করানোর ব্যবস্থা নিলাম। বড় স্যার তাকে এন্টি-টিবি ওষুধ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রোগীটার ড্রামাটিক ইম্প্রুভমেন্ট হলো। কিছুদিন আগে সে দেখা করতে এলো। আমি পাশের রুমে রোগী দেখছিলাম। তারা আমাকে খুজে বের করলো। মেয়েটা আমার হাত ধরে কিছুক্ষণ হাটলো।

মনটা যেন, আরবী প্রবাদ 'একশত লাল উট পাওয়া'র চেয়েও বেশি খুশি হয়ে গেলো!
আমি বাচ্চা কোন রোগী পেলে আমার মেয়ের সাথে তার গল্প করি। মেয়েটার একটা ছবি আমার মেয়েকে দেখিয়েছিলাম। বাসায় ফিরে টুক্কুশকে বললাম, একটা বাবুর গল্প তোমাকে বলেছিলাম না? যে কোন নড়াচড়া করতে পারে না, নাকে নল দিয়ে খায়! সে ভালো হয়ে আলহামদুলিল্লাহ। সে এখন হাটতে পারে!

টুক্কুশ বললো, হলুদ জামা পরা বেণী করা বাবুটা? আমি পুরনো গ্যালারি খুজে ছবিটা দেখলাম। আসলেই ছবিতে হলুদ জামা, চুলে বেণী। বাচ্চারা কত খুটিনাটি খেয়াল করে!
নিউরোলজি বিভাগের কাছে ঋণ দিন দিন বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই চমৎকার কিছু শিখছি। আমি এই বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞ।

লেখকঃ

ডা. মো. তরিকুল হাসান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য),
এমডি ফেজ-বি নিউরোলজি রেসিডেন্ট, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।


আরও দেখুন: