আপনার ক্যানসারের ঝুঁকি কতটুকু
ক্যান্সার কোষ (ইনসেটে ডা. তারেক জামান ইমন)
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসারের কোনো উপসর্গ থাকে না। হঠাৎ একদিন ছোট্ট কোনো উপসর্গ থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দুঃসংবাদটা জানা যায়। তখন আফসোস হয় যে কেন আগে এই জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হইনি। তাই সবারই জানা প্রয়োজন-
আপনার ক্যানসারের ঝুঁকি কতটুকু, কী কী উপসর্গ দেখা দিলে আপনি সতর্ক হবেনঃ
• যারা ধূমপায়ী বা পান-জর্দায় অভ্যস্ত, তাঁরা জানবেন এগুলো ৬০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য দায়ী।
• ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস ৩০ শতাংশ ক্যানসারের কারণ। এর মধ্যে পড়ে অতিরিক্ত লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত বা উচ্চ ক্যালরির খাবার, ছত্রাক পড়া খাবার, মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত পানি ইত্যাদি।
• অতিরিক্ত ওজন, কায়িক শ্রমহীন জীবনযাপন।
• দীর্ঘদিন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকা যেমন হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস এবং এইডস ভাইরাস, হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইত্যাদি সংক্রমণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
• নারীদের বাল্যবিবাহ, ঘন ঘন সন্তান ধারণ।
• মদ্যপান।
• কড়া রোদে দীর্ঘ সময় থাকা।
• অকারণে ঘন ঘন এক্স–রে করানো।
• পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকা, বিশেষ করে স্তন বা কোলন ক্যানসার।
• বয়স বৃদ্ধি।
ক্যানসার ঠেকাতে যা করবেন
নিজে ক্যানসারের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানা জরুরি। ক্যানসারের কোনো চিহ্ন নেই, উপসর্গ নেই কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা করানো উচিত। এতে প্রায়ই রোগ জটিল হওয়ার আগেই ধরা পড়ে। যেমন:
• নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিং ক্যানসার প্রতিরোধের একটি সফল উদাহরণ। বিয়ের তিন বছর পর থেকে (২১ বছরের আগে নয়) ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিন বছর পরপর পেপস টেস্ট এবং ভায়া টেস্ট করানো উচিত।
• বিশ বছর বয়স থেকে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে শেখা। ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিন বছরে একবার এবং ৪০ বছর হলে বছরে একবার চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো।
• ১৫-৪৫ বছর বয়সী পুরুষেরা প্রতি মাসে গোসলের সময় নিজের অণ্ডকোষ নিজে পরীক্ষা করে দেখা।
• প্রতি মাসে একবার দাঁত ব্রাশ করার সময় নিজের মুখ ও মুখগহ্বর নিজে আয়না দিয়ে পরীক্ষা করা।
• বছরে দুবার দন্তচিকিৎসকের কাছে মুখ পরীক্ষা করানো।
• প্রতি মাসে দেহের কোথাও তিল বা আঁচিল থাকলে নিজে পরীক্ষা করা।
• বয়স পঞ্চাশ বছর হলে কোলন ক্যানসারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
কখন সতর্ক হবেন
ঝুঁকি থাকুক আর না থাকুক, কিছু কিছু উপসর্গ অবহেলা না করাই উচিত। যেমন: আকস্মিক ওজন কমা, হঠাৎ রক্তশূন্যতা, চল্লিশের পর হঠাৎ ভীষণ অরুচি, স্তন বা যেকোনো জায়গায় কোনো গোটা বা দানা বুঝতে পারা, মুখের ভেতর দীর্ঘমেয়াদি ঘা, এক মাসের বেশি কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, কণ্ঠস্বরের আকস্মিক পরিবর্তন, মলের সঙ্গে রক্তপাত, কালো রঙের পায়খানা ইত্যাদি কিছু উপসর্গ সব সময়ই সন্দেহজনক। এসব ক্ষেত্রে দেরি না করে সমস্যা শনাক্ত করা দরকার।
লেখকের আরও লেখাঃ
যেসব খাবার ক্যান্সারের জন্য দায়ী
লেখকঃ
ডা. তারেক জামান ইমন
Research Medical Scientist
Histopathology and IHC, Pathology Department
The Mount Sinai Hospital
Manhattan, New York, USA.
Ex-student of Rajshahi Medical College (1987-95) and ex-Doctor of NICVD (National Institute of Cardiovascular Disease, Dhaka) (1996-1998) & National Heart Foundation Hospital (in 1999)