বিষয়গুলো আমাদের মেডিকেল কারিকুলামে নেই
দরদী চিকিৎসক (ইনসেটে লেখক)
আমার শিশু সন্তানের জ্বর, তার শরীর থেকে যখন রক্ত নেয়া হয়, আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। আমি নিজের আঙ্গুল নিজে চাপ দিয়ে ধরে রাখি, আমার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, খুব অস্থির লাগে, তখন আমি আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকিনা, আমি তখন বাবা হয়ে যাই।
আমার অর্জিত জ্ঞান তখন জিরো লেভেলে নেমে আসে,
এটাই পিতৃত্ব!
সংকটকালীন সময়ে সকল নিয়ম কানুন শিথিল করা বাঞ্ছনীয়! রোগী ক্রিটিক্যাল! বাবা, মা তার সন্তানকে দেখতে চাচ্ছেন- না বলবেন না। 'না' বলাকেই না বলুন।
পিতার মৃত্যুর সময় সন্তান পিতার পাশে বসে কোরআন শরীফ পড়তে চাচ্ছে, আপনিও পূর্ণ সম্মতি দিন। সাদা এপ্রোণ গায়ে জড়িয়ে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর পাশে দাঁড়ান। সবাই জানে আপনার কিছুই করার নেই- তথাপি আপনার উপস্থিতিই হবে রোগীর জন্য প্রশান্তিময় এক শীতলতা! মৃত্যু ঠেকানোর সাধ্য আপনার নেই, কারোরই নেই।
'How to deal with an angry patient,
Dealing with serious incidences,
How to break a bad news,
Duty of candour
-বিষয়গুলো আমাদের মেডিকেল কারিকুলামে নেই, ব্রিটিশ কারিকুলামের অত্যন্ত জরুরী এই টপিকগুলো উতরাতে না পারলে আপনি ব্রিটিশ পোস্ট গ্রাজুয়েট হতে পারবেন না। আমাদের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাতেও এগুলোর সংযুক্তিকরণ অত্যাবশ্যক।
আপনি চিকিৎসক, আপনি ব্যক্তি জীবনে পাগল ছাগল কিছিমের, উন্মাদ, ভবঘুরে, প্রচন্ড জেদী হতে পারেন- বাট সাদা এপ্রোণ গায়ে জড়ানো মাত্র আপনি শীতলতম মানুষে পরিণত হতে পারেন, আপনি রোগীর কথা শুনেন মন দিয়ে, বিরক্তি প্রকাশ করেন না- আপনি, আপনার জ্ঞান এবং মেধা বিজয়ী।
রোগীর আত্মীয় স্বজন যখন বুঝবেন- মানুষটা চেষ্টার কম করেননি, সময় শ্রম দিয়েছেন- আপনি সম্মান পাবেনই। তারপরও কিছু অমানুষ, বেয়াদব, ইতর রোগী বা রোগীর আত্মীয় সবখানেই থাকবে- তারা আপনাকে অসম্মান করলে বা করতে চাইলেও আপনার অতীত জীবনে অর্জিত হাজার রোগীর দোয়ায় আপনার কিচ্ছু করার সক্ষমতা তারা হারাবে।
যতো স্নায়ু চাপেই থাকুন, সেই বহিঃপ্রকাশ রোগী বা তার রক্তের আত্মীয়রা যেনো বুঝতে না পারে!
রোগীর নিকটাত্মীয় যেনো বিড়বিড়িয়ে বলে- "দেখে পাগল মনে হলেও, মানুষটা আসলে সলিড।"
এটাই আপনার চূড়ান্ত বিজয়!
লেখক :
DR. ASIF UR RAHMAN
MRCEM-UK.DA.MCPS.
FIPM-India.
BCS.MBBS
Consultant - NINS Emergency Medicine,
Intensive Care Medicine Specialist.