এটাই আমার কনফিডেন্স, আমার সাদা এপ্রোনের গৌরব।

ডা. আসিফ উর রহমান
2023-08-14 19:29:16
এটাই আমার কনফিডেন্স, আমার সাদা এপ্রোনের গৌরব।

নবজাতক কোলে নিয়ে ডা. আসিফ উর রহমান

চিকিৎসককে রোগীর জীবন বাঁচাতে অনেক সময় রিস্ক নিতে হয়। মহিলা রোগী না পুরুষ রোগী, স্পর্শকাতর স্হানে হাত দেবো নাকি দেবোনা- এইসব কঠিন বিষয়কে মাথায় রেখে অথবা প্রয়োজনে পাশ কাটিয়ে রিস্ক নেবার সময় চিকিৎসক তার সাদা এপ্রোন এবং চিকিৎসক জীবনে নেয়া হিপোক্রেটিক ওথ-কেই প্রায়োরিটি দেন।

আমার জীবনের একটা ঘটনা শেয়ার করি, বহু বছর আগের ঘটনা।

আয়েশা আক্তার বৃষ্টি নামক রোগীটা PV Bleeding নিয়ে ভর্তি হয়েছিলো, সাথে membrane rupture!
USG report টা ছিলো সন্দিহানl সনোলজিস্ট কোন cardiac pulsation পাননি!
ফুল টার্ম অথচ লেখা ছিলো gestational age 6 wks.....!!!!!
আমি স্টেথো বসিয়েছিলাম!
হঠাৎ মনে হলো কারো ছোট্ট বুকটার ধুপধুপ শব্দ. ....!
আমি আশ্চর্য হয়ে আবারো আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টের দিকে তাকালাম!
তখন গভীর রাত, আমি চেষ্টা করেছিলাম- সিনিয়রদের সহায়তা নেবার, আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলোনা।

আমাকে শুনতে হলো - " Ultrasonography বলছে বাচ্চা মৃত....আর আপনি মৃত বাচ্চার heart beat পাচ্ছেন.....? কি বলছেন উল্টো পাল্টা?
Pt কে পেইন কিলার দেন ....! কোনো রিস্ক নেয়া যাবে না!
সব investigation পাঠিয়ে দেন .....আমি সকাল আটটায় আসছি!"
মহিলা প্রচন্ড ব্যাথায় কাবু ...! আমি আবারো স্টেথোস্কোপ বসালাম.!

হ্যাঁ আমিই সঠিক ........ভদ্রমহিলা labour এ আছেন .....রোগী এবং তার বোনের অনুমতি নিয়ে সাহস নিয়ে NVD টা করেই ফেললাম! প্লাসেন্টাও ও manually removed হলো ...!! একটি নিষ্পাপ কান্না শুনতে পেলাম ..... l
কি ফুটফুটে সুস্থ্য বাচ্চা! মা যখন হাসলেন- আমার মনে হয়েছিলো এটাই আমার এ যাবতকালের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অর্জন!

এই NVD করানোর জ্ঞান আমি আমার ইন্টার্ন লাইফে অর্জন করেছিলাম। NVD করানোর সময় রোগীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে হয়, প্রয়োজনে হাত প্রবেশ করিয়ে বাচ্চা বের করতে হয়। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞান।

আচ্ছা ! কয়েকটা প্রশ্ন করি -
রোগীর স্বামী বা রোগী নিজে যদি পরবর্তীতে মামলা করতো আমার বিরুদ্ধে- তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেবার বা প্রবেশের অভিযোগ তুলে, আমি কি জেলে যেতাম?
আমাকে কি দুশ্চরিত্রবান চিকিৎসক বলা হতো?

এই যে বিনিদ্র রাত্রি জেগে একটা জীবনকে দুনিয়ার আলো দেখানোর আমার প্রচেষ্টা - সেটা কি নোংরা অপবাদে মূল্যহীন হয়ে যেতো ?

মূল বিষয়ে আসি - সম্প্রতি একজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে, ভুক্তভোগী চিকিৎসক রোগীর বাবা মায়ের সামনেই রোগীর স্পর্শকাতর স্থান পরীক্ষা করেছেন এবং নিজে সিজার করিয়েছেন। রোগী প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় ছিলেন। 

চিকিৎসকের হাতে রক্ত লেগে ছিলো, সেটা রোগী দেখেছেন এবং সেটার জন্য ফৌজদারী মামলা হয়েছে।

বিষয়গুলা এলার্মিং, এভাবে চলতে থাকলে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে কোনো চিকিৎসক এগিয়ে আসবেন না। স্বাহ্যখাত ভেঙ্গে পড়বে।

হ্যাঁ , সেদিন আমার হাতেও একজন মায়ের জরায়ুর রক্ত লেগে ছিলো, আমার চশমা ভিজে ঘোলা হয়ে গিয়েছিলো মায়ের জরায়ু থেকে হঠাৎ ছিটকে আসা পানি বা এমনিয়োটিক ফ্লুইডে। আমি চাইলেই বিষয়টা আমার কাজ নয় বলে এভোয়েড করতে পারতাম, আমি সেটা পারিনি, কারণ আমার মূল ফোকাসই ছিলো- যে কোনো মূল্যেই হোক আমার অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে একটা জীবনকে বাঁচানো এবং আরেকটা জীবনকে পৃথিবীর আলো দেখানো।

পৃথিবীর আদালত হয়তো আমাকে দোষী বলতে পারে, কদর্য লেপ্টে দিতে পারে আমার এতোদিনের অর্জনে, কিন্তু আমার বিবেকের আদালত বা সৃষ্টিকর্তার আদালতে আমি বেকসুর খালাস পাবোই।

এটাই আমার কনফিডেন্স, আমার সাদা এপ্রোনের গৌরব।

লেখক :

DR. ASIF UR RAHMAN

MRCEM-UK.DA.MCPS.

FIPM-India.

BCS.MBBS

Consultant - NINS Emergency Medicine,

Intensive Care Medicine Specialist. 


আরও দেখুন: