ডক্টর টিভিতে শুরু হলো বছরব্যাপী আয়োজন ‘মস্তিষ্কের যতকথা’
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম ও ডা. মো. মাঈনুল ইসলাম মুরাদ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের নিউরোসার্জারি বা নিউরোলজি বিষয়ে অনন্য একটি অনুষ্ঠান শুরু করেছে ডক্টর টিভি। মস্তিষ্কের নানা তথ্য ও রোগ নিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মস্তিষ্কের যতকথা’।
ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস নিবেদিত ‘মস্তিষ্কের যত কথা’ অনুষ্ঠানে ‘এই সময়ে স্ট্রোক সার্জারি’ বিষয়ে প্রথম পর্বের আলোচনায় অংশ নেন বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. মাঈনুল ইসলাম মুরাদের সঞ্চালনায় প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
দেশের প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ডক্টর টিভিকে বলেন, আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্রেইন স্ট্রোক। এটা অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্রতি বছর ৭ লাখ ৯৫ হাজার স্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হয়। ছয় লক্ষ দশ হাজার নতুন পেশেন্টের স্ট্রোক হয় আর বাকিদের দেখা গেলো ইতোপূর্বে স্ট্রোক হয়েছিল।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, স্ট্রোক হলে একদিকে রোগীদের মাঝে এবং রোগীর আত্মীয় - স্বজনের মাঝে থাকে মৃত্যুর বিভীষিকা। আর যাদের মৃত্যু না হয় তাদের মাঝে প্যারালাইসিস হবার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করে।
ডক্টর টিভির ওই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে দেশের প্রখ্যাত এ নিউরোসার্জন বলেন, রোগীর মাঝে যে জিনিসটা থাকে প্রকটভাবে সেটি হলো সে আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের মধ্যে কিছু না কিছু যারা বেঁচে থাকেন, তাদের মাঝে কিছু না কিছু প্যারালাইসিস থেকে থাকে। সেজন্য, কী করণীয় আমাদের উচিত সে সম্পর্কিত এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং রোগ নির্ণয় কীভাবে করা হয় এসব জিনিস ডক্টর টিভিতে আলোচনা হবে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, আমাদের জিডিপি মানে আমাদের আয়, বাৎসরিক মাথাপিছু আয় যে বেড়ে যাচ্ছে; এটা বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা আগে যে খাদ্যাভ্যাস ছিল, আমাদের আগে যে ধরনের কর্মক্ষমতা ছিল সেটার আমরা সঠিকভাবে পরিচর্যা না করার জন্য আমাদের লাইফস্টাইল অনেক চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে যার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এখন আমরা খাবারের সময় দেখা যায় রিচ ফুড খাই মানে কোলেস্টেরল লেভেল বেশি আছে এই ধরনের খাবার বেশি খাই যার জন্য আমাদের ব্লাড প্রেশার হয়, ডায়াবেটিস হয়। তারপরে হলো আমরা হাঁটাচলা কম করি। একটুতেই আমরা গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাই। আমাদের যে প্রত্যেকদিন, প্রাত্যহিক জীবনে হাঁটাচলা করা উচিত, ব্যায়াম করা উচিত, শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত; আমরা করি না। এসব কারণে দেখা যায় যে, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিভিন্ন অভ্যাসও আমাদের যেমন : ধূমপান করা এবং ড্রিংক করা এসকল জিনিসের কারণেও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া আমাদের নাগরিক জীবনে যে স্ট্রেসফুল কন্ডিশন এসব কারণেও ব্লাড প্রেশারের ফ্রাকচুয়েট হয়। এসব কারণেও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
দেশের প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আরও বলেন, ডক্টর টিভিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি জনগণের উদ্দেশে তারা যে এটা প্রচার করছেন এবং তাদের মাঝে যে ধরনের তথ্য দিলে নিজেদের জীবনযাপনের যে স্টাইলটা আছে সেটাকে ওনারা সঠিকভাবে গড়ে এই স্ট্রোকের ঝুঁকিটাকে যাতে কমানো যায় তাহলে আমাদের এই প্রোগ্রামের সাফল্য নির্ভর করবে। আমি ডক্টরস টিভিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং তার সাথে সাথে যে সকল চিকিৎসক এ প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত থাকছেন তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং এই অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করছি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, স্ট্রোক ব্রেনের রোগ, স্ট্রোক হার্টের রোগ নয়। আমরা প্রথমেই হার্টের রোগ ভেবে বলি স্ট্রোক করেছে। এটা বলে আমরা অনেক সময় আমাদের হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে চলে যাই অথবা হার্টের কোনো হসপিটালে চলে যাই অথবা আমাদের ব্রেইন স্ট্রোক করলেও হার্টের রোগ মনে করে অন্য কার্ডিওলজিস্ট অথবা হার্ট হসপিটালে চলে যাই। এ বিষয়ে জনসচেতনতা প্রয়োজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোক নিয়ে অনেক মিথ আছে। অনেকে স্ট্রোক হলে সোহরাওয়ার্দীতে যায়, হার্টের হসপিটালে যায়, অনেকে মনে করে হার্টের অসুখ। স্ট্রোকের বেসিক আসলে স্ট্রোক কী? কত ধরনের আছে? কী কী লক্ষণ হলে বুঝবো বা এর প্রতিকার কী? এছাড়াও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো দর্শকরা অনুষ্ঠানগুলোতে আলোচনা হতে পারে।