ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রোকশানা আফরোজ
2024-10-14 15:03:00
ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ) এর সভাপতি রোকশানা আফরোজ

অনিরাময় যোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা ক্যান্সার সার্ভাইভাররা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় দেখেছি যে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি একেবারেই অবহেলিত ও উপেক্ষিত। ক্যান্সার সেবা কেন্দ্রগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো ক্যান্সার কাউন্সিলর নেই। মূলত চিকিৎসকগণই কিছু অভয় দেন, যেটাকে কাউন্সিলিং বলা হয়।  
 

ক্যান্সার আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উপলব্ধি করেই আসলে সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন এর জন্ম। আমিসহ আমরা একজন আর একজনের কথা শুনি, পরামর্শ আদান-প্রদানসহ না বলা জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলতে পারি একজন আরেকজনকে। চিকিৎসা যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু হয় সাপ লুডু খেলা। এই অনিশ্চয়তাকে মেনে নিয়ে একজন আরেকজনের অনুপ্রেরণা হয়ে জীবনকে জয়ের চেষ্টায় আমরা এক হয়েছি। আমাদের পক্ষে বিপুল সংখ্যক ক্যান্সার ব্যক্তিদের কাউন্সিলিং করা সম্ভব নয়। সেজন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট, রাষ্ট্রীয় পলিসিতে ক্যান্সার কাউন্সিলিং কে যুক্ত করা।  
 

আজ এখানে আমি কোন একাডেমিক পেপার উপস্থাপন করছি না। তার জন্য বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। আমরা কেবল আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, তাই একাডেমিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে না দেখে ভুক্তভোগীদের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের কথাগুলো শুনবার এবং বুঝবার চেষ্টা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। 
 

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার অধিকারঃ
 

১০ই অক্টোবর ছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। করোনার আগে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে খুব একটা কথা শোনা না গেলেও এখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সিলিং কথাটার সাথে আমরা বেশ পরিচিত। WHO’র মতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সকলের মৌলিক অধিকার। The World Mental Health Report এর এবারের প্রতিপাদ্য No health without mental health. এতে বোঝা যায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব কতটুকু। মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। মাথাব্যথা, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামন্দা, হৃদরোগ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে! তাই শারীরিকভাবে সুস্থ হতে চাইলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে সবাই কে সচেতন হতে হবে। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলোর মধ্যে এক নম্বর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বিষন্নতা! বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে, এর ভিতরে ১৫ থেকে ২৯ বয়সের সংখ্যাই বেশি। প্রসূতি মা, প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যা এবং স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা পোষণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ইদানিং। আমাদের দেশে ৩ কোটির অধিক মানুষ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)। শিশু, বয়সন্ধির ছেলেমেয়েরা, প্রসূতি মা, দীর্ঘ মেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তিরা মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে। ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার প্রবণতা সাধারণ মানুষের তুলনায় ২০% বেশি হয়! বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা  উচিত! 
 

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার চিত্রঃ
 

২০২১ সালে ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লক্ষ ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রতিবছর প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সারে প্রতিবছর মৃত্যু হয় এক লক্ষাধিক। দেশের ৩৬টি সরকারি হাসপাতালে মধ্যে মাত্র ১৪টি তে ক্যান্সার চিকিৎসা দেয়ার সুবিধা রয়েছে। অপ্রতুল ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত নার্স, অপ্রতুল আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, এই রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। আমরা লক্ষণগুলো নিয়ে সচেতন নই বলেই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত হয় না। হাসপাতালে এত রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না, সময় মত চিকিৎসা না পেয়ে নিরাময়ের সম্ভাবনা আর থাকে না। ঢাকার মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতলে সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বেশিরভাগ সময়ে যন্ত্রপাতি বিকল থাকে, ফলে রোগীদের বেসরকারিভাবে এইসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গেলে প্রচুর অর্থের দরকার হয়, যেটা জোগাড় করা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।  
 

WHO’র নিয়ম মতে, জনসংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশে ১৭০টি ক্যান্সার হাসপাতাল থাকার কথা, সেখানে আছে মাত্র ২০টি। বেশিরভাগ রোগী হাসপাতালে আসেনা, যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশের বাহিরে চলে যায়। আমি শুধু হতাশার কথা বলছি না, আশার আলোও আছে। আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির কাজ চলমান। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগেও বেশকিছু হাসপাতাল সুলভে চিকিৎসার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করছে! এর ভিতর উল্লেখযোগ্য আহসানুল্লাহ মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল, গণসাস্থ্য নগর হাসপাতাল! 
 

ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক  স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তাঃ 
 

ক্যান্সার কোনো মরণব্যাধি না, এটি একটি জটিল রোগ। সামাজিক ট্যাবু ও ক্যান্সার সম্পর্কে ভুল ধারণা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে বাধ্য করে অন্যের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে। চিকিৎসা চলাকালীন ও পরবর্তীকালে মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক অনেক রকমের পরিবর্তন ঘটে ক্যান্সারযোদ্ধা ও কেয়ারগিভারের মাঝে। প্রিয়জনকে হারানোর ভয়, অর্থনৈতিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়নও কেয়ারগিভারের উপরেও ভীষণ রকম চাপ তৈরি হয়। এরূপ জটিল পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই শুধুমাত্র অনকোলজি যথেষ্ট নয়। সাইকো অনকোলোজি কথাটি আমাদের কাছে নতুন হলেও এ নিয়ে গবেষণা ও প্রয়োগ চলছে অনেক দেশেই, অনেক বছর আগ থেকেই। 
 

আরেকটি গবেষণায় প্রমাণিত, যেসকল ক্যান্সার যোদ্ধা ও কেয়ারগিভার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন, তাদের নিরাময়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুন। ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার সময় চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ভীষণভাবে জরুরি। ক্যান্সার চিকিৎসায় উন্নতি হওয়ায়, আগের তুলনায় এখন ক্যান্সারযোদ্ধাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসার সময় প্রাপ্ত কেমোথেরাপি, সার্জারি, অত্যন্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধের ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় শারীরিক পরিবর্তনটুকু চোখে পড়লেও মানসিক বিপর্যয়টুকু খেয়াল করা হয় না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে চিকিৎসার কষ্টকর ধাপগুলো পার করা অনেক কঠিন হয়ে যায় রোগীর জন্য।  
 

একজন কাউন্সিলর ক্যান্সারযোদ্ধাকে মোটিভেট থাকতে সাহায্য করে, আপন পরিবর্তন আনতে এবং আবেগীয় উঠা নামাটা নিয়ন্ত্রণ করতে! বদলে যাওয়া শারীরিক এবং মানসিক অবস্থানকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে একজন কাউন্সিলর। বদলে যাওয়া নতুন জীবনকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কোন বিকল্প নেই। 
 

আমাদের কথাঃ
আমাদের প্রকাশিত ২টি বই- ১. এখানে থেমো না : ক্যান্সার লড়াকুদের বয়ান, ২. এখানে থেমো না : ক্যান্সার লড়াকু  ও পরিচর্যাকারীদের বয়ান। এই দুইটি বইয়ে ৪২ জন ক্যান্সার যোদ্ধা ও ৩৫ জন পরিচর্যাকারীর বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ আছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি এবং জানাই এর ১৯টি পর্ব অনলাইনে প্রচারিত করেছি। এখানে ক্যান্সারযোদ্ধা, সার্ভাইভার এবং বিশেষজ্ঞগণ নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং মতামত জানিয়েছেন। অনলাইনে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কর্মসূচিটিও চলমান।  
 

ক্যান্সারযোদ্ধা ও কেয়ারগিভারদের গল্পগুলো থেকেই আমাদের ক্যান্সার চিকিৎসায়র অবস্থা ও উপেক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চিত্রটি উঠে এসেছে। একেক জন ক্যান্সার যোদ্ধা এবং কেয়ারগিভারের গল্পগুলো এক এক রকম। হাসপাতালে যখন নিজের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে, তখন সাংবাদিক দিল আফরোজ আপা হাসপাতালের, চিকিৎসা ব্যবস্থার অনিয়ম নিয়ে লিখা শুরু করেন। নিজের ছাদ বাগানে ঔষধি গাছের চারা তৈরি করে হাসিমুখে বিলিয়ে যাচ্ছেন আমাদের ড. জেসমিন পারভীন সীমা আপা।  

 

কেমো চলাকালীন অবস্থাতেও পড়াশুনা চালিয়ে নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত অনেকেই। কেয়ারগিভারদের ভূমিকা আমাদের সুস্থ হওয়ার পেছনে প্রধান অবদান রেখেছে বরাবর! সন্তান হারিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে সুমি আপা গড়ে তুলেছেন প্রশান্তি, যেখানে মেডিটেশন, রিলাক্সেশন, ইয়োগা, রিফ্লেক্সোলজি শেখানো হয়। শিশু সন্তান আশিককে হারিয়ে গড়ে উঠেছে আশিক ফাউন্ডেশন, যেখানে শিশুদের সার্বিক সহায়তা দেয়া হয়। আমাদের আর একজন সহযোদ্ধা গড়ে তুলেছেন আলোক নিবাস! ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের থাকা এবং খাওয়ার অত্যন্ত সুলভে ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ভুল রিপোর্ট, ভুল চিকিৎসার শিকার অনেকেই, তাই আমাদের সার্ভাইভার তরুণ বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা গড়ে তুলেছেন ল্যাব। আধুনিক সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা তাদের ল্যাবে করা সম্ভব।

 

 মনের জোরকে কাজে লাগিয়ে ডা. মো. সালেহ মাহমুদ তুষার তিনবার ক্যান্সারকে হারিয়ে এখন নিজের চিকিৎসা চালিয়েও চিকিৎসা দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। প্রবাস থেকেও আমরা তিন-চার জন সার্ভাইভারের লেখা পেয়েছি। তারা কাউন্সিলিং সেবা, পরিবারসহ সমাজের সাপোর্ট, স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছেন। যা তাদেরকে মানসিকভাবে শক্ত রেখে নিরাময়ের রাস্তাটি সহজ করেছে। আমাদের আরেকজন সহযোদ্ধা নিজেই একজন 
কেয়ারগিভার ছিলেন, পরে নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এখন নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন।  
 

কেয়ারগিভারদের মানসিক চাপের কথাও জেনেছি। ক্যান্সারে মা কে হারিয়ে সন্তানের আত্মহত্যার কথাও জানা গেছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্তদের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। অল্প সময়ে সবার কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না, আমাদের বইগুলোতেই আমরা পেয়ে যাই ক্যান্সার চিকিৎসার বাস্তব চিত্রটি! 
 

আমাদের প্রস্তাবনাঃ
 

ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় বিষয়ে আশু, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আমরা সিসিসিএফ এর পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরছি: 
 

১. ক্যান্সার চিকিৎসায় অনকোলজির অন্যতম উপাদান হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে যুক্ত করতে হবে। যাতে করে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্যান্সার সনাক্তকরণের সাথে সাথে, চিকিৎসা চলাকালীন ও চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে চেকআপের সাথে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নন, পরিবারকেও কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের বিধান থাকতে হবে।   
 

২. কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষিত টিম গঠন করা। স্থানীয় আগ্রহী তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এ ধরনের টিম গঠন করা যেতে পারে। টিমের তরুণদের আর্থিক সহযোগিতা করা। 

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যান্সারাক্রান্তদের প্রাথমিক পর্যায়ে মানসিক সাপোর্ট দেবার জন্য ‘মেন্টাল হেল্থ কেয়ার সার্পোটা’র হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। একটানা এক বছর কেউ ‘মেন্টাল হেল্থ কেয়ার সাপোটার হিসেবে ভূমিকা রাখেলে বিশেষ সার্টিফিকেট পাবে। এমন কি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে এটাকে অন্তর্ভূক্তি করা উচিত। 
 

৪. প্রস্তাবিত আটটি বিভাগীয় ক্যান্সার হাসপাতালে কাউন্সিলিং সেবা নেবার জন্য অবশ্যই একটি বিভাগ থাকতে হবে ও অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক যেখানেই ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে, সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে কাউন্সিলিং সেবা দেবার জন্য প্রফেশনাল কাউন্সিলর থাকতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনে পদ সৃষ্টি করতে হবে। 
 

৫. অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্যান্সারাক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেজন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগসহ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।  
 

৬. ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও রেফারেল সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। 
 

৭. ক্যান্সার সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা ভাঙাতে, সব ধরণের স্ক্রিনিং যেমন: সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন এবং এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে! 
 

৮. জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে স্বল্প/ মধ্যকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। 
 

৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, এডুকেশন এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগসহ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা সংক্ষিপ্ত কোর্স করেেত হবে। যাতে করে আক্রান্তদের কাউন্সিলিং সার্ভিস দিতে পারে। 
 

১০. সব স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ক্যান্সার নিয়ে কাজ করেন তারা যেন মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্যান্সার হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানসিক সাপোর্ট দেবার ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি। এই সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর কর্মীদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক সেবাদানকারী হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে তাদের পক্ষে কাজটা করা অনেক সহজ হবে। 
 

১১. আজকের সভায় উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আমার ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ফোরাম’ করতে চাই। এই ফোরাম গবেষণা, পর্যালোচনা, মতামত বিনিময়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশে একটি মডেল কার্যক্রম দাঁড় করানোর প্রস্তাব করবে।  
 

১২. ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক অ্যাপস তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।  
 

১৩. ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি! ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটি জাতীয় ক্যান্সার তহবিল গঠন করতে হবে। 

 

 

উপস্থাপনায় 
 

রোকশানা আফরোজ 
সভাপতি 
সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ)। 


আরও দেখুন: