স্বাস্থ্যের সকল স্তরে একযোগে জনবল নিয়োগ দরকার
স্বাস্থ্যের সকল স্তরে একযোগে জনবল নিয়োগ দরকার
কেবল একস্তরে নিয়োগ নয়, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সকল স্তরে একযোগে নিয়োগ ও অন্যান্য ঘাটতি পূরণ হওয়া প্রয়োজন ..
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (মেডিকেল শিক্ষা) এর অধীন পূর্বের ২৯টি পদ ও বর্তমান ১৪৯টি পদ সর্বমোট ১৭৮টি উচ্চপর্যায়ের(সহকারী পরিচালক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত)পদ সৃষ্টির ঘোষণা হয়েছে ১৬-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় – উভয়ের চেষ্টায় যা সামাজিক মাধ্যমে এসেছে ১৬ এপ্রিল / ২০২৩ খ্রিঃ তারিখে। একইসাথে স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিভিন্নস্তরে আরও যে সকল বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, সে বিষয়গুলোও থাকা প্রয়োজন ছিল।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কেবল মহাপরিচালক, পরিচালক, সহকারী পরিচালকের পদ সৃষ্টি করলেই বিদ্যমান জনবলের ঘাটতি পূরণ হয় না। এ সকল সৃষ্ট পদও পূরণ হয়নি। লক্ষ্য যদি থাকে চিকিৎসা জ্ঞান ও সেবা শিক্ষার্থী ও পীড়িত জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তাহলে ব্যবস্থাপনার সকল স্তরে জনবলের ঘাটতি একসাথেই পূরণ করা প্রয়োজন, জরুরিও বটে। যেহেতু জনগণ ও সরকার উভয়ে এ বিষয়ে উদাসীন এবং চিকিৎসকদের পক্ষ হতে কোন আবেদন নিবেদন ও পরামর্শ মন্ত্রণালয় গ্রাহ্য করে না সেহেতু একতরফা ও অপরিকল্পিতভাবে পদ সৃষ্টি –আইওয়াশ ছাড়া অন্য কিছু না। যদিও এ সকল পদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
চিকিৎসা ব্যবস্থার একস্তরে জনবলের ঘাটতি রেখে অন্যস্তরে পূরণ করলে চিকিৎসা প্রদানের সংকটের কোন পরিবর্তন আসে না। প্রান্তিকের পরিচ্ছন্ন কর্মী থেকে কেন্দ্রের মহাপরিচালক পর্যন্ত– প্রত্যেক স্তরের জনবল রোগী চিকিৎসায় প্রয়োজন। জেলা উপজেলা এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পর্যায়ে মেডিকেল অফিসার, কনসাল্টেন্ট ও অধ্যাপকের পদ ব্যাপকাংশেই শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে এ সকল শূন্য পদ পূরণের কোন উদ্যোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাই। এই শূন্য পদ পূরণ ছাড়াও বেলা দুইটা ৩০ মিনিট থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত এ সকল হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনে কোন পদ সৃষ্ট নাই এবং চিকিৎসকও পদায়ন হয় না। এ সময় রোগীদের কষ্ট ও আহাজারিতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কর্তাব্যক্তিদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না।
এ ছাড়াও শূন্যতা রয়েছে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট-এর এবং অপারেশন থিয়েটারের জনবলের। এসব দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে কেবল কেন্দ্রে তদারকির পদ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি বোঝাতে চায়? এসকল পদের প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কি ভূমিকা? কেনই বা এ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ লাগবে? এ সকল প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত/পারবে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকারা।
সরকার যেহেতু চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়কে পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত হাসপাতাল সহ বেসরকারি পর্যায়ে ‘ধুমসে’ চিকিৎসা কেনাবেচা চলে। বিত্তবানদের আনাগোনা সে সকল বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে। যারা বিত্তহীন, বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না– তারা মফঃস্বলের উপজেলা, জেলা ও রাজধানী পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলোর মেঝেতে গড়াগড়ি যায়। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি রাষ্ট্র তথা সরকারসমূহকে এই ৫২ বছরে এতটুকু বিচলিত করে নাই। মানবিক হওয়ার জন্য সরকারকে বলতে হবে কেন? এই দায়বদ্ধতার শপথ নিয়েই তারা সরকারে অবস্থান করছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের কথা নিশ্চয়ই তাদের স্মরণ আছে।