সরকারি ডাক্তারেরা কি দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না?

ডা. মারুফুর রহমান অপু :
2022-12-26 21:18:28
সরকারি ডাক্তারেরা কি দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না?

ডা. মারুফুর রহমান অপু

অন্যান্য সরকারি পেশাজীবীর সাথে সরকারি চিকিৎসকদের পার্থক্য হচ্ছে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রমোশন ইত্যাদির জন্য নিয়মিত পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ ও নানা ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এই কাজটা ডাক্তারেরা বাধ্য হয়েই করে সেটা না বরং বেশিরভাগ সময়ে নিজের ইচ্ছাতেই করে। কেননা দেশের পড়ুয়া ভালো ছাত্রদেরই একটা বড় অংশ ডাক্তার হয়। তারা নিজের দক্ষতা বাড়াতেই আজীবন পড়াশোনা করে।

এইসব পড়শোনার মাঝে একটা অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরীক্ষা হচ্ছে এমআরসিপি। সারা পৃথিবীর ডাক্তারেরা কাড়াকাড়ি করে এই পরীক্ষা দেয়। এতই চাহিদা এই পরীক্ষার যে মুহুর্তের মধ্যেই সিট বুকিং শেষ হয়ে যায়। মিনিটখানেক এদিক ওদিক হলেই ঐ বারের সিট আর পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তারই এই পরীক্ষাটি দেন।

এর জন্য বছরের পর বছরের পড়াশোনা তো আছেই সেই সাথে পরীক্ষার সিট পাওয়ার জন্য ভাগ্য ও লাগে। পরীক্ষার ফি ১২০০ পাউন্ডের উপরে যা বাংলাদেশী টাকায় দেড় লাখের বেশি। তাছাড়া পরীক্ষার জন্য আগে ভাগে কেন্দ্রে যাওয়া, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, প্র‍্যাকটিস সেশন এর আয়জন সহ বহু পরিশ্রমের ব্যাপার আছে। পরীক্ষাটি বাংলাদেশে হয়না। কাছাকাছি ইন্ডিয়াতে হয়, সিংগাপুরে হয়।

একজন ডাক্তারের এত বছরের পরিশ্রম পড়াশোনা আর এতগুলো ঝক্কি পার হবার পর বিধি মোতাবেক ১৫ দিনের ছুটি চাইলে যদি কোন রকম যৌক্তিক কারণ, ব্যাখ্যা ছাড়াই "না-মঞ্জুর" এর পরাক্রমশালী আদেশ পেতে হয় তাহলে তার কর্মস্পৃহা কোথায় দাঁড়াবে বলতে পারেন?

অথচ কলমের খোচাটা যিনি দিয়েছেন তিনি কিন্তু ডাক্তার দেখাতে গেলে বড় ডাক্তার খোজেন, বিদেশী ডিগ্রী খোজেন, এফসিপিএস, এমআরসিপি, এফআরসিপি খোজেন। শুধুমাত্র এমবিবিএস এর কাছে যান না। তাহলে সরকারি ডাক্তারেরা কি দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না?

আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না? দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কি বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে স্টান্টবাজি করে দেশের টাকা বাইরে পাচার করা প্রক্রিয়ায় চলবে? এর পরেও কি বলবেন চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে বন্দি রাখা উচিত?

আমলাতন্ত্রের জনক খোদ ব্রিটিশরা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বাইরে বের করে এনে স্বতন্ত্র হেলথ সার্ভিস গঠন করে স্বাধীন করেছে যা এখন সারা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। আর আমাদের দেশে হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ যুগ যুগ ধরে যার সুযোগে চলে দালাল রাজত্ব, লোকে সরকারি হাসপাতালের নোংরা ঘিঞ্জি পরিবেশে ভর্তি হতে চায় না নিরুপায় না হলে।

ডাক্তারেরা ছুটি পায় না, প্রণোদনা পায় না, প্রমোশন পায় না, পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছে না। তাহলে সেবা দেবে কোন মোটিভেশনে? এই সুযোগে গলা কাটা প্রাইভেট সার্ভিস এর রম রমা বাজার বাড়তেই থাকবে আর ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে ডাক্তার এনে স্টান্টবাজি করে দেশের টাকা বাইরে পাঠানোর চর্চা চলতেই থাকবে।

যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই একদল মানুষ বঙ্গবন্ধুর হাত গড়া সার্বজনীন পাবলিক হেলথ সার্ভিসকে গুড়িয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের হাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিক্রি করে দিচ্ছে। এই দস্যিপনা থামবে কবে?


আরও দেখুন: