চিকিৎসায় এবারের নোবেল প্রাইজের তাৎপর্য বিশ্লেষণ

অনলাইন ডেস্ক
2022-10-04 10:07:26
চিকিৎসায় এবারের নোবেল প্রাইজের তাৎপর্য বিশ্লেষণ

জেনম সিক্যুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে সুইডিশ বিজ্ঞানী সান্তে প্যাবো প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, মানুষ এবং মানুষ সদৃশ্য আরো দুটো বিলুপ্ত প্রজাতি নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যান প্রায় একই সময় বিবর্তিত হয়

মেডিসিন এবং ফিজিওলজি ক্যাটেগরীতে এবারের নোবেল প্রাইজ অন্যবারের চেয়ে কিছুটা আলাদা এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

জেনম সিক্যুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে সুইডিশ বিজ্ঞানী সান্তে প্যাবো প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, মানুষ এবং মানুষ সদৃশ্য আরো দুটো বিলুপ্ত প্রজাতি নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যান প্রায় একই সময় বিবর্তিত হয়। এবং এই তিন ধরনের হোমিনিদের ভেতরে জিনের আদানপ্রদান ঘটে মিলনের মাধ্যমে।

সংক্ষেপে এভাবে বলা যায়:

(১) এক লক্ষ বছরেরও আগে ইউরোপ এবং এশিয়াতে বসবাস করতো নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যান নামক মানুষ-সদৃশ্য দুটো প্রজাতি।

(২) প্রায় একই সময় আফ্রিকা মহাদেশে বসবাস করতো হোমো স্যাপিয়েন্স বা মানুষ প্রজাতি। ঐ অঞ্চলেই মূলত বিবর্তন ঘটে মানুষের।

(৩) প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে কিছু মানুষ ইউরোপ এবং এশিয়ায় দিকে মাইগ্রেট করে।

(৪) বিজ্ঞানী সান্তে প্যাবো ৪০ থেকে ৬০ হাজার বছরের পুরোনো নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যানের হাড় নিয়ে জেনোম সিক্যুয়েন্সিং করে প্রমান হাজির করেন যে, মানুষ এক সময় নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যানের সাথে বসবাস শুরু করেছিলো। এবং তাদের মধ্যে মিলনের মাধ্যমে বংশবিস্তারও ঘটেছিল।

(৫) এর ফলে নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যানের কিছু জিন আমাদের (মানুষের) শরীরে প্রবাহিত হয়। এবং এই জিনগুলো মূলত আমাদেরকে হাই অ্যালটিচিউড বা উচ্চ ভুমিতে বসবাসের উপোযোগী করে তুলে। এছাড়াও সংক্রমণ প্রতিরোধক কিছু জিনও নেন্ডার্থ্যালদের কাছ থেকে আমাদের শরীরে চলে আসে। এতে করে আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ায় মাইগ্রেট করা মানুষগুলো নতুনভাবে অভিযোজিত হয়, যা তাদেরকে নতুন পরিবেশে বাঁচতে সহায়তা করে।

(৬) কোন এক অজ্ঞাত কারণে প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে এ পৃথিবী থেকে নেন্ডার্থ্যাল এবং ডেনিসোভ্যান প্রজাতিদুটো বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর আমরা মানুষেরা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরি।

(৭) বর্তমানে আমাদের জেনোম সিক্যুয়েন্সিং করলে সবার শরীরেই প্রায় ১-৬ শতাংশ জিন পাওয়া যায়। যা এসেছে নেন্ডার্থ্যাল অথবা ডেনিসোভ্যান থেকে। আর এই জিনগুলোকে একত্রিত করলে দেখা যায় নেন্ডার্থ্যাল অথবা ডেনিসোভ্যানের ৪০ শতাংশ জিন এখনও বয়ে চলছে আমাদের মাঝে!

(৮) তবে যারা কালো আফ্রিকান তাদের শরীরে এই নেন্ডার্থ্যাল বা ডেনিসোভ্যানের কোন জিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। নেন্ডার্থ্যাল বা ডেনিসোভ্যান প্রজাতি দুটো আফ্রিকাতে মাইগ্রেট করেনি। তার আগেই তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

(৯) হিউম্যান ইভোলিউশন বা মানব বিবর্তনে এই জিন প্রবাহের তথ্য উদঘাটনের জন্যই এবার নোবেল পুরস্কার দেয়া হল সান্তে প্যাবোকে।


আরও দেখুন: