স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
2022-09-26 17:01:50
স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন

বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনার ফলেই গণটিকার কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ওষুধনীতি, হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি, নার্সিং পেশার উন্নয়ন, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা চালু, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যখাতের সকল বিষয়ে অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সদিচ্ছাতেই ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়”।

বর্তমানে দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৩৭টি। সামরিক বাহিনী পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৬টি।

এবার নির্মাণ করা হলো স্বাস্থ্যখাতের বিস্ময়কর অর্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। চলতি বছরের গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট ‘এস্টাবলিশমেন্ট অফ মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ এর শুভ উদ্বোধন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণতকরণ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনাসমূহও উদ্বোধন করেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। গরিব রোগীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ থেকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি দরিদ্র তহবিলে মোট ২৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহায়তায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অর্জনের জন্য এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির প্রণয়ন এই সরকারের এক বিরাট অর্জন।

বিশ্বের দেড় শত দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৮ হাজার ৫ শত কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৯০ শতাংশের বেশি উপকারভোগী মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, নাক-কান-গলাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল। স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নয়নে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপোষহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গনআন্দোলনের মাধ্যমে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়।

১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ এ পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাধীন রয়েছে। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জনের ম্যধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বার সরকার গঠিত হয়। এছাড়া তিনি জাতীয় সংসদে তিনবার বিরোধীদলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরিশেষে বলবো, সহস্র গুণের আলো ছড়ানো বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার অবদান, বর্ণাঢ্য জীবনের কথা বর্ণনাতীত। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং তাঁর সহস্র গুণের আলোয় সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করে চলছেন বিশ্ব শান্তির দূত, মাদার অব হিউম্যানিটি, বাংলাদেশের কান্ডারি শেখ হাসিনা। দেশের কান্ডারি, আলোর দিশারী বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের সফল কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা শতায়ু লাভ করুন; পরম করুণাময়ের কাছে আবারো এই প্রার্থনা করি।

লেখক: অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।


আরও দেখুন: