সরকারি হাসপাতালের নীরব গল্প (এক)

অনলাইন ডেস্ক
2022-09-21 12:34:35
সরকারি হাসপাতালের নীরব গল্প (এক)

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।

এই নিয়ে অনেক লিখার। কিন্তু আমি খুব গুছিয়ে লিখতে পারিনা। 'একটি হাসপাতাল, একজন নৃবিজ্ঞানী, কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়' এই নামে শাহাদুজ্জামানের একটি বই হয়তো অনেকেই পড়েছেন। এই বইটিতে এদেশের সরকারি বড় হাসপাতালগুলোর সমস্যার মোটামুটি একটি স্পষ্ট চালচিত্র আঁকা আছে। তবে সেটা মূলত পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষণ। কখনো নিজের খুব ঘনিষ্ট অভিজ্ঞতাজাত বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের সেবাপ্রদান ও গ্রহনজনিত সমস্যা নিয়ে লিখবো বলে ভাবি, পারবো কিনা জানিনা।

আজ অল্প একটু স্পষ্ট কথা বলি। হাসপাতালগুলোর অদৃশ্য সার্ভিস চার্জ। হাসপাতালে অনিয়মের কারনে অদৃশ্য খরচের সবটুকু যায় আয়া, খালা, দাদু, ওয়ার্ডবয়, ওটিবয়দের পকেটে। এই খরচের একটি টাকাও ডাক্তার বা সিস্টাররা নেন না। এটি একটি ওপেন সিক্রেট। তথ্যটি জনগন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সবার জানা।

এর একটি বড় কারন, এদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর ভারে জর্জরিত। বিশাল জনসংখ্যার বিপরীতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে ক্লীনার পর্যন্ত সবার সংখ্যাই অপ্রতুল। ফলে সব কাজে তৈরী হয় দীর্ঘসূত্রিতা। রোগীরা এই দীর্ঘসূত্রিতা থেকে বাঁচার পথ খুঁজেন, চেষ্টা করেন টাকা দিয়ে নিজের কাজটি অন্যের আগে করিয়ে নিতে। এছাড়া অসৎ কর্মচারীরাও সহজ কাজকে জটিল করে রোগীদের ফাঁদে ফেলে। এদের হাতে হাসপাতালের সবাই জিম্মি। যারা প্রশাসক তারাও। তারা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এইসব মরিয়া দূর্নীতিবাজদের চটাতে চান না, অনেকক্ষেত্রেই এরা রাজনৈতিক আশ্রয়ও পায়। কাজেই চিকিৎসক বা প্রশাসকরা ঝামেলা এড়িয়ে নিজের কর্মকালটি নিরুপদ্রব রাখতে চান। আমার মনে পড়ে অনেক বছর আগে এধরনের একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারির ওটিবয় আমাকে দোতলা থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিল।

সরকারি হাসপাতালের এই সমস্যাটির সহজতম, প্রমানিত সমাধান হচ্ছে ক্রমশ এই শ্রেনীর স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া। পুরো জনবলই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ করা। তবে এটি সভ্যতার সাথে সাংঘর্ষিক। একটি সভ্য দেশে এমন হবার কথা নয়, রাষ্ট্রের কর্মচারী সততার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে এটাই হবার কথা। যাই হোক, আমরা হয়তো তা ভুলে গেছি।

একটি হাসপাতালের কথা বলি, তার নাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের একজন কর্মচারীও কারো কাছ থেকে রশিদ ছাড়া একটি টাকা গ্রহন করেনা। ইমারজেন্সি, অপারেশান থিয়েটার, ওয়ার্ড, প্যাথলজি, রেডিওলজি, আই সি ইউ কোথাও কোন কর্মচারী বেতনের বাইরে একটি টাকাও আয় করেনা। বিশেষ করে অপারশেন থিয়েটারে রোগি ওঠানো, নামানো, পোস্ট অপে আনা নেওয়া কোথাও কোন কাজের বিনিময়ে কেউ যদি কিছু বখসিস দেওয়ার চেষ্টা করে সেটাও তারা জোড়ালোভাবেই প্রত্যাখ্যান করে। এই হাসপাতালটি এই অনিয়ম থেকে মুক্ত। আমাদের আরো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সেসবের সমাধান আমাদের হাতে খুব বেশি নেই। হয়তো কখনো সেসবও ঠিক হবে। তখন হয়তো আমার কর্মস্থল বদলে যাবে।


আরও দেখুন: