প্রসঙ্গ : বিসিএস পরীক্ষার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফর্মূলা
বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন
বিগত ০৩/০৯/২০২২ তারিখের বেশ কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায়
বিসিএস পরীক্ষাপদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) শিরোনামে একটা খবর প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু প্রতিটা পত্রিকায় পরিবেশিত খবর হুবহু এক, সেহেতু প্রেসনোটের মাধ্যমে পিএসসি কতৃক তা গনমাধ্যমকে প্রদান করা হয়েছে।
খবরের সুচনায় বলা হয়েছে,”গত কয়েকটি বিসিএসের ফলাফল মূল্যায়ন করার পর দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বেশি প্রশ্ন করা হচ্ছে। এ কারণে বিজ্ঞান থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষায় বেশি সুবিধা পাচ্ছেন।”
আমার জানা মতে, পিএসসি পরীক্ষা সিলেবাসের বিষয়াবলী ও তার মান বন্টন পূর্বনির্ধারিত থাকে। প্রিলিমিনারীর ২০০ নম্বরের মধ্যে সাধারন গনিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্নের মান = ৪৫ আর লিখিত পরীক্ষায় ৯০০ নম্বরের মধ্যে বিজ্ঞান ও গনিতে ২০০।
বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন কারা করে ? কোন বিসিএস এ কে, কেন, পূর্ব নির্ধারিত মানের অধিক কত নম্বরের প্রশ্ন করেছে??? পিএসসি তার তদন্ত করেছে কি? করে থাকলে তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। না করে থাকলে সূচনাতে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য পরিবেশনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার করা উচিত।
৪০ ও ৪১তম বিসিএসে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বেশি সুবিধা পেয়েছেন বিধায়, পিএসসিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি বলেছে, “পরীক্ষায় মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন। তাই এখন থেকে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির বিষয়টি দেখা হবে।” তবে সে রিপোর্টে বিজ্ঞানে বেশি প্রশ্ন করার কোন উল্লেখ নেই। এটা কি ধরনের তদন্ত কমিটি যারা কোন কারন নির্নয় করতে ব্যর্থ হয়েও পরীক্ষার প্রশ্নের মাধ্যমে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দিলেন।
“একচেটিয়াভাবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীরা যেন বেশি সুবিধা করতে না পারেন, সে জন্য পরীক্ষাপদ্ধতিতে ওই পরিবর্তন আনছে পিএসসি।”—— পিএসসির এই বক্তব্য কি এটা প্রমান করে না যে, শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা প্রার্থীদের ঠেকানোর জন্যই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর ধূয়া তুলে প্রশ্নপত্রে ব্যপক পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘level total outcome’ এর ফন্দি আঁটছেন!
আপনারা তো দেখি আপনাদের গুরুওস্তাদ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের ০৫/০৭/২০২০ তারিখে প্রথম আলোতে লেখা “সাধারণ ক্যাডারে এত বিশেষায়িত ডিগ্রিধারী কেন?” এই ধমকে ভীত হয়ে, তার পরামর্শ মত ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে ১০০ নম্বর রয়েছে, তা বাদ দেওয়ার কুমতলব কার্যকর করছেন!!
এইই বুঝি আপনাদের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর ফর্মূলা! এ থেকেই আপনাদের অংকের দুর্বলতা প্রমানিত হল। ভুল ফর্মূলায় অংক কষলে তার ফলাফল হয় ‘অশ্বডিম্ব’ নইলে ‘কাঁচকলা’ই হবে।
বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হলে চাকরিতে লেভেল এনজয়িং ফিল্ডও (সুযোগ-সুবিধা ভোগের সমতল ক্ষেত্র) তৈরি করা প্রয়োজন।
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর সহজ সরল ফর্মূলা জেনে নিন……..
মোট তিনটা বিভাগ ১) কলা ২) বানিজ্য ও ৩) বিজ্ঞান।
প্রিলিমিনারি ২০০ নম্বর তিন ভাগ করলে ফল ৬৬ অব ২।
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ করতে কলা থেকে ৬৭, বানিজ্য থেকে ৬৭ ও বিজ্ঞান থেকে ৬৬ নম্বরের প্রশ্র করতে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আরো সহজ। ৯০০ নম্বর তিন ভাগ করে প্রতি ভাগে ৩০০ নম্বরের প্রশ্ন করলেই মিটে যায়।
এই সহজ সরল ফর্মূলা বুঝার মত জ্ঞান, বোধও বুদ্ধি যদি আপনাদের না থাকে এবং আপনারা যদি আপনাদের গুরুওস্তাদের- ৯০০ বাদ বিজ্ঞান ১০০ অর্থাৎ কলা ৮০% + বানিজ্য ২০% + বিজ্ঞান ০০% = ১০০% এই ফর্মূলা কার্যকর করতে চান, এটা করার এখতিয়ার যদি আপনাদের থাকে এবং রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রধানমন্ত্রীর কোন অনুমতির প্রয়োজন না হয়, তাইলে করতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন ২০১২ সাল ও ২০১৭ সালের দুইবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ অমান্য করেছেন।
তবে ‘মাইনাস বিজ্ঞান’ ফর্মূলা চালু করেও আমাদের বাংলাদেশ সরকারের (স্বেচ্ছাচারী) নিয়োগ প্রদানের কর্তৃপক্ষ, পিএসসি, কলাদের রক্ষা করতে পারবে না। ক্যাডার বৈষম্যের কারনে, মেধার জোরে বলিয়ান হয়েই, বিজ্ঞানে ডিগ্রীধারীরা সাধারণ ক্যাডারে প্রবেশ করে বর্তমান জনপ্রশাসনের চরিত্র উন্মোচন করে দিবে। তাদের এ লড়াই আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচার লড়াই। আশা করি আগামী দশ বছরের মধ্যে প্রশাসনের কম করে ৫০% বিজ্ঞানে ডিগ্রীধারীরা দখল কর নেবে। এটাই পিএসসির প্রতি তাদের চ্যালেঞ্জ।
॥পারলে ঠেকাও!!!
স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে টেকনিক্যাল ক্যাডারের সাতজন কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদায়ন করে দেশের উন্নয়নের ধারাকে গতিময় করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে টেকনিক্যাল জ্ঞানশূন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে Service Reorganization & Condition Act, 1975 প্রণয়ন করেছিলেন। এই ‘Act’ এ সকল চাকুরীর সমান মর্যাদা এবং বেতন বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছিল। জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকান্ডের পর ‘Act’টি যুগোপযোগী না করে আমলাতন্ত্র সুকৌশলে এটাকে নিজেদের সুবিধার্থে পরিবর্তন করে উপনিবেশিক আমলা নির্ভর ভাবধারায় গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির বিষয়ে ২০১২ সালে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে কার্যকর উপায় বের করতে সেসময়ে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে প্রধান করে কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।