অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহারে চোখের বড় ক্ষতি
স্মার্টফোনের নীল আলো শরীরে মেলাটোনিন নামের হরমোন উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে
মোবাইল ফোন যে নীল আলো ছড়ায়, রুমের লাইট নিভিয়ে দেয়ার কারণে রাতে সেটি আরও তীক্ষ্ণ হয়ে যায়। স্মার্টফোনের নীল আলো শরীরে মেলাটোনিন নামের হরমোন উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
মেলাটোনিন মূলত এমন একটি হরমোন, যা রাতের বেলা নিঃসৃত হয়ে শরীরকে ঘুমিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে থাকে। এই মেলাটোনিনের অভাবে ঘুম আসতে বাধা পায় এবং ঘুমের স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে।
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর নীল আলো সরাসরি চোখে আঘাত করে। ফলে চোখের কোষের ক্ষতি হয়। ফলে চোখে ব্যথা অনুভব হয়। এছাড়া চোখে শুষ্ক বোধ করা, ঘোলা দেখা, দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া, এমনকি রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে তা পরদিন স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ঘটলে শরীরে নিউরোটক্সিন তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে ভালো ঘুম হতে দেয় না।
এছাড়া, মাথা, ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা অনুভূত হতে দেখা যায়।
স্মার্টফোনের আলো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের কাজেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, ফলে স্থুলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রাতে দীর্ঘক্ষণ আলোর সংস্পর্শে থাকা এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার সঙ্গে স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে।
কি করবেন?
১. প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। রাতে ঘুমাতে যাবার কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই নীল আলো নিঃসরণকারী সব গেজেটের ব্যবহার বন্ধ করুন।
২. স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় আমরা স্বাভাবিকের তুলনায় কম সংখ্যক বার চোখের পলক ফেলি। এর ফলে চোখে চুলকানি ও শুষ্কতা অনুভূত হতে পারে। তাই স্মার্টফোনের ব্যবহারের সময় আলাদা করের প্রতি ২০ মিনিট পর পর দশবার চোখের পলক ফেলুন। প্রতিবার চোখ বন্ধ করে এক সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখার পর চোখ খুলুন।
৩. স্মার্টফোন ব্যবহারের ফাঁকে ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্যে বিরতি নিন এসময় চোখের দৃষ্টি অন্তত ২০ ফিট দূরে কোনকিছুর ওপর নিবদ্ধ করুন। এতে চোখের মাংসপেশীগুলো শিথিল হবে। আশেপাশে সবুজ গাছপালা থাকলে সেদিকে তাকিয়ে চোখকে বিশ্রাম দিতে পারেন। সবুজ রং চোখের জন্যে আরামদায়ক।
৪. অতিরিক্ত আলো বা একেবারে কম আলো- দু’টোই চোখের জন্যে ক্ষতিকর। তাই আশপাশের পরিবেশের আলো অনুযায়ী ফোনের brightness set করুন। রাতের গভীর অন্ধকারের মাঝে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৫. চোখ ও স্মার্টফোনের পর্দার মাঝে ১৬-১৮ ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রাখুন। প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন।
৬. খেয়াল রাখুন, ভুল font size, display colour নির্বাচনের কারণে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ যেন না পড়ে। এগুলো এমনভাবে নির্বাচন করুন, যেন তা চোখের জন্যে সহনীয় ও আরামদায়ক হয়।
৭. আপনার স্মার্টফোনের পর্দার ওপর anti-glare glass protector ev matte screen protector ব্যবহার করুন।
৮. Blue light filter ব্যবহার করতে পারেন।
৯. চোখকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
ডা.সাদিয়া মনোয়ারা উষা
লেখক : জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার।