অসাধারণ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন ডা. বুলবুল
আতাউর রহমান কাবুল
ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল। একজন দন্ত চিকিৎসক। বেশ কয়েক বছর আগে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল। আমাদের অফিসে প্রায়ই আসতেন।
প্রথম দিনের পরিচয়ে আমি রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সদা হাসিমুখ একজন মানুষ। জানালেন, অ্যাপোলো (বর্তমানে এভারকেয়ার) হাসপাতালের আশেপাশে কোনো একটা জায়গায় তিনি চেম্বার করেন। জানলাম, দেশের বাড়ি রংপুর। তিনি আমার নম্বর নিলেন, আমিও তার নম্বর নিলাম। আমরা ফেসবুক বন্ধুও হলাম।
পরে ডা. বুলবুলের সঙ্গে সম্পর্কটা আমার এমন হয়ে গিয়েছিল, যখনই দন্ত-সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় রোগীরা আমার শরণাপন্ন হতেন, আমি সবার আগে তাকে ফোন দিতাম। আসলে তার আন্তরিকতাই এ পর্যায়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।
এমন কোনো দিন নেই যে তিনি আমার ফোন ধরেননি। ফোনে তো পরামর্শ দিতেন, মেসেঞ্জারেও বিস্তারিত ওষুধপত্র লিখে দিতেন। সামান্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ কালের কণ্ঠ স্বাস্থ্য পাতায় তার নামে লেখা ছাপিয়েছি। নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি চ্যানেলের স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানেও অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তবে তিনি প্রচারবিমুখ একজন মানুষ ছিলেন।
ডা. বুলবুল বিনা পয়সায় প্রচুর মানুষের দাঁতের চিকিৎসা করতেন। এরমধ্যে সাংবাদিকরা তার প্রিয় বন্ধু ছিল। ছিন্নমূল ও পথশিশুদের বিনামূল্যে দাঁতের চিকিৎসা দিতেন। গরিবের চিকিৎসক, বিনাপয়সার চিকিৎসক সেই বুলবুল ছিনতাইকারীদের হাতে মারা যাবেন, বিষয়টি রহস্যজনক।
যতদূর জানি, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ওতপ্রোতভাবে রাজনীতি করতেন বলে শুনিনি। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে মারা যান তিনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল।
ডা. বুলবুলের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। একদল ছিনতাইকারী মুখোশ পরে এলো, তাকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলে চলে গেল, তার কাছে ১২ হাজার টাকা, ঘড়ি সবই ছিল অথচ কিছুই নিল না শুধু সেলফোনটি ছাড়া! পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারী। আর আমরাও লিখে দিলাম ‘ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক নিহত’, ঘটনা হয়ত এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।
বুলবুল ভাই, সামর্থ্যবান, সামর্থ্যহীন, অসহায় মানুষের জন্য আপনি কতকিছু করলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আপনি। অথচ এদেশ আপনাকে অবশেষে এমন মৃত্যু উপহার দিল! আপনি যাদের সঙ্গে মিশতেন, ভিন্নধারার কারণে তারা হয়ত আপনাকে নিয়ে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস পর্যন্ত লিখবেন না। আপনার দলও প্রতিবাদে নামবে না আপনার জন্য।
কিন্তু আপনি আজ নেই এই কষ্টটা মেনে নিতে পারছি না। আপনার দেড় বছর বয়সী ছেলে ও সাত বছরের পরীর মতো মেয়ে বাবা হারাল! তারা আর কোনো দিন বাবা বলে কাউকে ডাকতে পারবে না। স্ত্রী হারাল প্রিয়তম স্বামীকে। তাই পুরস্কারটা আল্লাহতায়ালার কাছ থেকেই নিবেন। তিনি নিশ্চয়ই আপনাকে ঠকাবেন না। আপনার জন্য দোয়া থাকবে সারাজীবন।
হে আল্লাহ, গরীবের ডাক্তারখ্যাত বুলবুলকে কবুল করুন। পরিবারে রহমত ও শান্তি দিন।
লেখক: আতাউর রহমান কাবুল
সাংবাদিক ও ডেপুটি ইনচার্জ, নিউজ২৪