বিসিএসের নবীন চিকিৎসকের বেতন নির্ধারণ
ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো
ইতিমধ্যে ৪২তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া চার হাজার চিকিৎসক কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। পুরনো কর্মকর্তারা খুব সহজে বেতন বিল সাবমিট করতে পারেন। কিন্তু যারা একেবারেই নতুন, তাদের দুটি ধাপ পার করার পর বেতন বিল সাবমিট করতে হয়।
অনলাইন বেতন নির্ধারণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলোর ফটোকপি ও স্ক্যান কপি (পিডিএফ অথবা জেপিইজি ফরমেট) প্রয়োজন হবে—
ক) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও স্ক্যান কপি
খ) নিজের মোবাইল ফোন নম্বর, যা সব সময় আপনার কাছে থাকবে
গ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়োগ শাখা থেকে জারি করা আপনার নিয়োগ আদেশ/গেজেট। এ গেজেটের প্রথম পৃষ্ঠা, যে পৃষ্ঠায় আপনার নাম আছে, সেই পৃষ্ঠা এবং শেষ পৃষ্ঠা, যেখানে সিনিয়র সচিব/উপসচিবের নাম লেখা আছে— এই তিন পৃষ্ঠা স্ক্যান করবেন। পিডিএফ অথবা জেপিইজি ফরমেটে সেভ করতে হবে।
ঘ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আপনার পদায়নের আদেশ।
ঙ) এসএসসি সনদ
চ) এমবিবিএস সনদ
ছ) বিএমডিসি প্রদত্ত স্থায়ী/পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধন সনদ
জ) যোগদানপত্র
ঝ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গৃহীত যোগদানপত্র
ঞ) টিআইএন (Taxpayers Identification Number) সনদ
ট) যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনি বেতন নিতে চান, সেই অ্যাকাউন্ট নম্বর, চেক বইয়ের প্রচ্ছদের ফটোকপি।
ঠ) যে শাখায় আপনার অ্যাকাউন্ট, সে শাখার নাম ও রাউটিং নম্বর।
প্রথম ধাপ
ক) আপনি ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ নিয়ে বসুন। স্মার্টফোন দিয়েও করা সম্ভব। কিন্তু ল্যাপটপে কাজ করাটা তুলনামূলক সহজ। সাথে প্রিন্টের সুবিধা থাকলে ভালো হয়।
খ) Google-এ গিয়ে অনলাইন বেতন নির্ধারণী IBAS অথবা Integrated Budget and Account System লিখে সার্চ করুন।
গ) আপনাকে স্বাগতম জানিয়ে একটি পৃষ্ঠা হাজির হবে। এ পৃষ্ঠার তথ্যগুলো ভালো করে পড়ুন। এরপর পরবর্তী ধাপ- এ ক্লিক করুন। সেখানে জরুরি নির্দেশনা শিরোনামে একটি পৃষ্ঠা আসবে। সেই নির্দেশনা ভালো করে পড়ুন।
ঘ) তারপর একেবারে নিচে গিয়ে ‘আমি প্রিন্ট নিয়েছি, পড়েছি এবং বুঝেছি’- এর বামে ক্লিক করুন এবং ‘পরবর্তী’ লেখা অংশে ক্লিক করুন। বাম দিকের বক্সে ক্লিক না করলে পরের পৃষ্ঠায় যাওয়া যাবে না।
ঙ) পরবর্তী পৃষ্ঠায় ১০টি অপশন আসবে। এর মধ্যে আপনি ‘নতুন নিয়োগ’- এ ক্লিক করুন। এরপর যে পৃষ্ঠা আসবে, সেখানে আপনি ‘বেসামরিক’ অপশনে ক্লিক করুন।
চ) তখন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর চাইবে। এর নিচে ক্যাপচা পূর্ণ করে লগইনে ক্লিক করতে হবে। আপনার মোবাইল নম্বরে ওটিপি আসবে। তখন একে একে সবগুলো ঘর পূরণ করতে হবে।
> মনে রাখবেন, আপনাকে নিয়োগদানকারী হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন নম্বর ০৫.০০.০০০০.১৪৭.১১.০১১.২১-৪৩, তারিখ ০৮-০২-২০২২ .খ্রি এবং আপনাকে পদায়নকারী হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পদায়নের প্রজ্ঞাপন নম্বর ৪৫.০০.০০০০.১৪৮.১১.০২০.২০২১১৬৩, তারিখ ২৩-০২-২০২২ খ্রি.
> আপনাদেরকে যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়েছে, তাই আপনার মূল অফিস হলো প্রধান কার্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
> আপনাদের বেতন গ্রেড ৯, গ্রেডের প্রারম্ভিক বেতন ২২,০০০ টাকা, আপনার প্রাপ্য অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট ৩টি, আপনার বেতন ধাপ ২৫,৪০০ টাকা এবং নির্ধারিত মূল বেতন ২৫,৪০০ টাকা।
> সবগুলো ঘর পূরণ করার পর সাবমিট করলে ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন নির্ধারণ বিবরণী’ শিরোনামে একটি পৃষ্ঠা আসবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এ পৃষ্ঠার কয়েক কপি প্রিন্ট করতে হবে। এ পৃষ্ঠার উপর দিকে একটি ট্র্যাকিং নম্বর থাকবে। ট্র্যাকিং নম্বরটি ভোলা ঠিক হবে না। ট্র্যাকিং নম্বরে ২৭০০-এর পরে একটি হাইফেন আছে। এই হাইফেনটিও আপনার ট্র্যাকিং নম্বরের অংশ। পরবর্তীতে এই হাইফেনটিও লিখতে ভুল করবেন না।
দ্বিতীয় ধাপ
ক) যেহেতু আপনাদের মূল পোস্টিং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। তাই আপনাদের বেতন প্রদানকারী অর্থ অফিস হলো, ‘প্রধান হিসাবরক্ষণ কার্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, হিসাব ভবন, সেগুন বাগিচা, ঢাকা’। ইংরেজিতে Chief Accounts Office. পাকিস্তান আমলের মতো অনেকেই একে এজি অফিস বলে ডাকে। পাক-মটর অনেক আগেই বাংলামটর হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মুখের ভাষায় এজি অফিস আজও প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিস হয়নি। একজন সচেতন মানুষ অন্যকে তার শুদ্ধ নামে ডাকে। আপনারাও শুদ্ধভাবে প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিস/চিফ অ্যাকাউন্টস অফিস/সিএও অফিস বলবেন।
খ) প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে একজন অ্যাকাউন্টস অফিসারের কাছে আপনার ‘বেতন নির্ধারণ বিবরণী’র প্রিন্ট কপি এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দেবেন। ডকুমেন্ট বলতে, উপরে আমি যে ১১টি ডকুমেন্টের নাম লিখেছি, সেগুলো। টিআইএন, ব্যাংকের চেক বইয়ের ফটোকপি, ব্যাংকের শাখার নাম, রাউটিং নম্বর, অ্যাকাউন্ট নম্বরের ডকুমেন্ট সাথে করে নিতে ভুল করবেন না।
গ) অ্যাকাউন্টস অফিসার এই ডকুমেন্টসগুলো চেক করে আপনার বেতন নির্ধারণী অ্যাপ্রুভ করবেন। সবগুলো ডকুমেন্টের মূলকপি এবং ফটোকপি চেক করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। (অ্যাকাউন্টস অফিসার নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। এদের অনেকেই পদোন্নতিপ্রাপ্ত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। আর অল্প সংখ্যক বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা। অডিট সুপার হলেন ১০ম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা)
ঘ) আপনার একটি ইউজার নাম লাগবে, একটি পাসওয়ার্ড লাগবে। পাসওয়ার্ডে একটি বা দুটি ক্যাপিট্যাল লেটার লাগবে, গণিতের ভাষার অক্ষরও লাগবে।
ঙ) ইউজার নাম ও পাসওয়ার্ড ভালো করে টুকে রাখবেন। ভুলে গেলে বেতন বিল সাবমিট করতে পারবেন না।
লেখক: ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো
বিভাগীয় প্রধান
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান