ওষুধ বিতরণে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে

ডা. মো. তরিকুল হাসান
2022-02-15 21:57:27
ওষুধ বিতরণে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে

দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা দরকার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নীতিনির্ধারণী মহল থেকে শুরু করে আমজনতা পর্যন্ত প্রায় সবাই মনে করেন, ফ্রি ওষুধ বিতরণ করতে পারলেই চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে। আমি এর সঙ্গে মোটেও একমত নই। আমি মনে করি, শুধু সুবিধাবঞ্চিত অসহায় বা বিশেষ শ্রেণির মানুষদের ফ্রি ওষুধ সরবরাহ করা যেতে পারে।

কারণ

১. সবাইকে ফ্রি ওষুধ বিতরণ করার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশের নেই।

২. ফ্রি ওষুধ বিতরণ করলে সমাজের স্বার্থপর সুবিধাভোগীদের হাতেই বেশি যাওয়ার সম্ভাবনা।

৩. অনেক ওষুধই অপব্যবহার হয়।

৪. যারা বিতরণ করছেন তাদের যোগ্যতা ও বিতরণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য ওষুধের সঠিক ব্যবহার হয় না।

৫. ফ্রি ওষুধের অনেকেই সঠিক মূল্যায়ন করে না। অনেকের বাড়িতে ওষুধ নষ্ট হতে দেখা যায়।

পড়ছিলাম আকবর আলি খানের ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’। তিনি এই বইয়ে দেখিয়েছেন ফ্রি, দান-খয়রাতের বাস্তবভিত্তিক কিছু সমস্যা। আমি এগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করছি। যেভাবে সমাধান হতে পারে-

প্রস্তাবনা

১. দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। যেমন- দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বিধবা, অতি-বৃদ্ধ ইত্যাদি। এই তালিকা নিয়মিত যাচাই-বাছাই ও আপডেট করতে হবে। এই তালিকা অনুযায়ী ফ্রি ওষুধ বিতরণ করতে হবে।

২. ওষুধ বিতরণকারীদের জন্য ব্যবস্থাপনা প্রদানকারীদের ন্যূনতম এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী হতে হবে। সিএইচসিপিদের ক্ষেত্রে OTC drug এবং ডিএমএফ ডিগ্রিধারীদের কেবল তাদের জন্য নির্দিষ্ট গেজেটে প্রকাশিত ওষুধ বিতরণের আদেশ প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।

৩. বিতরণের প্রতিটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এতে না হয় দরিদ্রদের ব্যবস্থা হলো, তাহলে মধ্যবিত্তদের কী হবে?

মধ্যবিত্তদের জন্য প্রতিটি হেলথ ফ্যাসিলিটিতে ন্যায্যমূল্যের সরকারি ফার্মেসি স্থাপন করতে হবে। যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ কোম্পানিতে উৎপাদিত ওষুধ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা খরচসহ ন্যূনতম মুনাফায় বিক্রি হবে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ওষুধের মূল্য কমাতে বাধ্য হবে।

ডা. মো. তরিকুল হাসান

মেডিকেল অফিসার

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বোয়ালমারী, ফরিদপুর


আরও দেখুন: